বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সীমান্তে সংঘর্ষে তিন গ্রামবাসী নিহত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

গরু ধরাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) গুলিতে ছাত্রসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারীসহ ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের প্রথমে হরিপুর হাসপাতাল ও পরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন বকুয়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নবাব (৩০), জহির উদ্দিনের ছেলে সাদেক (৪০)। এ দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর নেওয়ার পথে বহরমপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জয়নুল (১২) মারা যায়। গুলিবিদ্ধরা হলেন বহরমপুর গ্রামের বাবু (২৮), মিঠুন (১৮), ইসাহাক (৩৫), রাসেল (১৬), সাদেক, মুনতারা (৪৫), নওশাদ (২৫), আবদুল হান্নান (৬০), জয়গুন (৩৫), নুর নেহার (৬০), তৈমুর (২৫), সিংহাড়ী গ্রামের আফসারুল (২৮), সোহেলসহ প্রায় ২০ জন। এদিকে গ্রামবাসীর হামলায় পাঁচ বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। স্থানীয়রা জানান, বহরমপুর গ্রামের হবিবর রহমান কয়েকদিন আগে রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ হাট থেকে দুটি গরু কেনেন। গতকাল সকালে সেই গরু স্থানীয় যাদুরানী বাজারে বিক্রি করতে বেরিয়ে যাদুরানী মহাবিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে বেতনা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় গরু মনে করে রাস্তা থেকে ভটভটিসহ গরু দুটি আটক করেন। তারা বিজিবি ক্যাম্পের উদ্দেশে গরু বহনকারী ভটভটিসহ গরু দুটি নিয়ে যাত্রা করেন। হবিরর রহমানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে তার পরিবারের লোকজন গাড়িটি আটকিয়ে বিজিবির কাছে জানতে চান কী কারণে তাদের গরু আটক করা হলো। উত্তরে বিজিবি সদস্যরা বলেন, ভারতীয় গরু তাই আটক করা হয়েছে। এ সময় গরুর মালিক গরু কেনার কাগজপত্র বিজিবিকে দেখান। তবু বিজিবি সদস্যরা গরু দিতে অস্বীকৃতি জানালে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিত া শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন বিজিবির কাছ থেকে গরু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত ও ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। বকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বর্ষা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন এটা নিশ্চিত। কৃষকের গরু ভারতীয় বলে অভিযোগ তুলে বিজিবি টানাটানি করে। এ সময় গ্রামবাসীসহ পথচারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাধা দেন। এতে বিজিবি নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালায়।’ হরিপুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান হতাহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিজিবি তাদের জীবন রক্ষায় গুলিবর্ষণ করেছে। তবে এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রকৃত দেষী ও ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করবে।’ ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ বলেন, ‘বিজিবির একটি প্যাট্রল টিম পাঁচটি গরু সিজ করে ক্যাম্পে ফেরার পথে চোরাকারবারি ও এলাকাবাসী দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিজিবির ওপরে হামলা চালায়। তাদের অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেনি। বরং উত্তেজিত হয়ে বিজিবির অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং দুটি গরু ছিনিয়ে নেয়। গ্রামবাসীর হামলায় পাঁচ বিজিবি সদস্য আহত হওয়ার পর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়।’ ওই গরুগুলো ভারতীয় চোরাকারবারিদের এমন তথ্য বিজিবির কাছে আছে বলে জানান বিজিবির অধিনায়ক।

সর্বশেষ খবর