সিঙ্গাপুরে মোস্তফা সেন্টারের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় মনে হয় যেন বাংলাদেশের কোনো শহরের চিত্র। চারদিকে সব বাংলায় সাইনবোর্ড। একই চিত্র মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরের বুকিত বিনতাং এলাকায়। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন বাংলা সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে। দোকানপাট, রেস্টুরেন্টসহ রাস্তার নামও বাংলায় লেখা। একই চিত্র দেখা যায় জাপানের টোকিওতে। বাঙালিরা এখানে স্থায়ীভাবে না থাকলেও তাদের মাধ্যমে চলে বাংলা সংস্কৃতির চর্চা। ইতালিতে অনেক বাঙালি অভিবাসী রয়েছে। তাদের জীবনধারণের যাবতীয় কাজকর্ম যেমন- সাংস্কৃতিক জীবনাচরণ, পড়াশোনা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত রেখেছেন বাংলাকে। ইতালির বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা লাজিও, লম্বার্ডিসহ রোম মিলান এবং ভেনিসের কিছু এলাকায় তারা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। ব্যবহার করছেন বাংলা ভাষা। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়ালেস এবং ভিক্টোরিয়ায় ৫৩ হাজারের মতো বাঙালি আছেন। এ ছাড়াও সিডনি এবং মেলবোর্নে প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করছেন। রাস্তার পরিচয়, দোকানের নামসহ মোড়ে মোড়ে ব্যবহার করেন বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড।
লন্ডনে বসবাসকারী ২ লাখ ৮৩ হাজার বাংলাদেশির বেশির ভাগই বসবাস করেন টাওয়ার হ্যামলেটের রাস্তা ব্রিক লেনে। অনেকের কাছে এটি বাংলাটাউন হিসেবে পরিচিত। এখানে বাঙালির শিল্পচর্চার জন্য প্রদর্শনী কেন্দ্র, চারুকলা ও ফ্যাশন বিষয়ে কোর্স চালু হয়েছে। বেশির ভাগ বাঙালি এখানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত। বাংলাটাউনে এলে চারদিকে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে মনে হতে পারে আপনি বাংলাদেশেই আছেন। বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটে বাঙালি আধিক্যে গড়ে ওঠা বাংলাটাউন দেখেও আপনার একই কথা মনে হতে পারে। ‘মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট’ এবং ‘হ্যামট্র্যাক’ শহরে গেলে চমকে যেতে পারেন যে কেউ। শহরজুড়ে চলছে বাংলাদেশি রিকশা! সেখানে বসবাসরত বাঙালিসহ অন্য দেশের পর্যটকরা উৎসাহ নিয়ে সেই রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
সেখানে আছে বিভিন্ন বাঙালি রেস্তোরাঁ এবং সুপারশপ। এক কথায় শহরের অধিকাংশ অধিবাসী এখন বাঙালি আর সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্বও দিচ্ছে বাঙালি। বাংলাদেশি অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মার্কিন-বাংলাদেশি পাবলিক এফেয়ার কমিটি।২০১৭ সালের রেকর্ড বলছে, পুরো কানাডায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার বাংলাদেশি মানুষ সেখানে বসবাস করছে। এদের বেশির ভাগ কানাডার ওনতারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কিউবেক এবং আলবার্তায় থাকে। তবে প্রধান শহর যেমন টরন্টো, ভ্যানকুভার, মন্ট্রিল, এডমনটন, ওত্তাও এবং ক্যালগ্যারিতে বাঙালির দেখা বেশি পাওয়া যায়। সে হিসাবে পূর্ব কানাডীয় অঞ্চলকে ছোট বাংলাদেশ বললেও ভুল হবে না। কারণ এখানকার জীবনাচরণ, রীতিনীতি সবই বাংলাদেশের।