বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মধুর ক্যান্টিনে মিলনমেলা

৯ বছর পর ছাত্রদলের কোলাকুলি শুভেচ্ছা বিনিময়, সহযোগিতার আশ্বাস ছাত্রলীগের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

মধুর ক্যান্টিনে মিলনমেলা

দীর্ঘদিন পর গতকাল ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের মিলনমেলায় পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ছাত্রদলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় -রোহেত রাজীব

ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রনেতার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। পাশাপাশি টেবিলে বসেছিলেন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। দুপুরে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ ও প্রায় নয় বছর পর মধুতে বসা ছাত্রদল। ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে আসার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক রাজনীতির নতুন যাত্রা হলো বলে দাবি করে সংগঠনটি। অন্যদিকে ইতিবাচক রাজনীতি করলে ছাত্রদলকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় ছাত্রলীগ।

গত বুধবার প্রায় নয় বছর পর ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রদল। বেলা ১১টার দিকে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী ৮-১০ জন নেতা-কর্মীসহ মধুর ক্যান্টিনে আসেন। সেখানে আগে থেকেই বসে ছিলেন ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় সাদ্দাম হোসেন ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কুশল বিনিময়ের পর ছাত্রদল নেতারা পাশের একটি টেবিলে একত্রে বসেন। একই সময় পাশের টেবিলে বসে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস। এর পরই একে একে মধুর ক্যান্টিনে আসতে থাকেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাবির বিভিন্ন হল শাখার নেতৃবৃন্দ। ঢাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীও মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন মধুর ক্যান্টিনে। স্লোগান স্লোগানে মুখরিত করেন চারদিক। এ সময় ছাত্রদল নেতাদেরও বেশ উৎফুল্ল মেজাজে দেখা যায়। তবে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সামান্য উত্তেজনার সৃষ্টি হলে সাদ্দাম হোসেনের হস্তক্ষেপে তা স্বাভাবিক হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। এতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আসার বিষয়ে সহযোগিতার জন্য প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে যে ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা হয়েছে, আমি মনে আজ তার নতুন যাত্রা হলো।’ এখন থেকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নিয়মিত রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাত দফা দাবি করেছিলাম। প্রথম দাবিটি ছিল, বিশ^বিদ্যালয়ের সব হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী ধারা যুক্ত আছে তা বিলুপ্ত করতে হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা নয় বছর পর ক্যাম্পাসে এসেছি। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। আমরা দাবি জানিয়েছি ন্যূনতম তিন মাস সহাবস্থান নিশ্চিত করতে। এর পরই ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হবে।’ সহাবস্থানের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ক্যাম্পাসে নির্বাচনের পরিবেশ সন্তোষজনক কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিন মাস সহাবস্থান নিশ্চিতের পরই বোঝা যাবে পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।’

দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবতে চাই।’ ভোটার তালিকায় থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল দেওয়া হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সম্মেলন শেষে সাড়ে ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন ত্যাগ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদল যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এতে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে এসেছে, আমি তাদের স্বাগত জানাই। আমরা আসলে কাউকে কোনো দিন বাধা দিইনি। এটাই তার প্রমাণ।’ সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষার পরিবেশ স্থিতিশীল রেখে রাজনীতি করলে ছাত্রলীগ তাদের সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর