বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক ভুল সংসদে না আসা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক ভুল সংসদে না আসা : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সংসদ সদস্যদের সংসদে না আসাকে ‘রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত’ মন্তব্য করে তাদের আবারও সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা অল্প আসন পেয়ে অভিমান করে সংসদে আসছেন না, এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। সংসদে এলে তারা কথা বলার সুযোগ পাবেন। সংসদ টিভি আছে, যা সারা দেশের মানুষ দেখে। এ সুযোগ তারা কেন হারাচ্ছেন, তা আমি জানি না। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেয়েছি সবাই সম্মিলিতভাবে দেশটাকে গড়ে তুলব। তাই আমি নির্বাচনের আগে সব দলকে ডেকেছিলাম। সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং সবাইকে আমি আমন্ত্রণ করেছিলাম যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত দশ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ পেয়েছে। আর সুফল পেয়েছে বলেই জনগণ বহুপূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিল যে, তারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং জনগণ সেই ভোট দিয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, এখন যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও অল্প সিট পেয়েছে বলে অভিমানে পার্লামেন্টে আসছেন না, আমার মনে হয় এটা তাদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ ভোটের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই তারা দিয়েছে। আমার আহ্বান এটাই থাকবে, যারাই নির্বাচিত সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নোত্তরে সংসদ নেতা বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান এবং ওআইসির নেতৃবৃন্দসহ প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান আমাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৭ বিশ্বনেতা জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসব বার্তা পেয়ে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গর্বিত ও আনন্দিত। এসব অভিনন্দন বার্তায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের জনবান্ধব নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন, জনগণের কঠোর পরিশ্রম এবং সহযোগিতার ফলে। আমি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাব। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব। স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আগামী দিনেও সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও শান্তিময় দেশ। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনীতি করে দেশের সুনাম ক্ষুণœ্ করতে চেয়েছে। তবে আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে বার বার তা ব্যর্থ হয়েছে। কুচক্রী মহল যাতে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ক্ষেত্র তৈরি না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থা তথা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে অসাম্প্রদায়িক জাতি-রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে ইমামদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে জুমার খুতবায় নিয়মিত সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অবসর সময়ে আবার গ্রামে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে গ্রামটা হচ্ছে আমাদের প্রাণ। কেননা আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামেই বড় হয়েছি, ওই কাদামাটি মেখেই বড় হয়েছি। খালে ঝাঁপ দিয়ে, গাছে উঠে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি, হয়তো একটা পর্যায়ে ঢাকায় চলে এসেছি। কিন্তু গ্রামের টান কখনো মুছে যায়নি, মুছে যায় না। এখনো মনটা পড়ে থাকে আমার ওই প্রিয় গ্রামে। সংসদ নেতা বলেন, গ্রামের মানুষকে আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা দিতে চাচ্ছি। কারণ একটু ভালো হলেই গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা, এটা আমার আসলে কোনো দিনই পছন্দ ছিল না। কেননা আমি গ্রামে জন্ম নিয়েছি, গ্রামেই বড় হয়েছি। কাজেই সবসময় আমার একটা আকাক্সক্ষা, যখনই আমি অবসর নেব তখন গ্রামের বাড়িতে গিয়েই থাকব।

 সেখানে সবুজ শ্যামল সুন্দর পরিবেশ সবসময় আমাকে টানে। কাজেই এটাই আমার একটা ইচ্ছা। আমি মনে করি, গ্রামের নির্মল বাতাস, সুন্দর পরিবেশ, এটা মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সুস্থ রাখে। মন ভালো থাকে, প্রশান্তি জোটে। শহরের ইট-কাঠের এই বদ্ধ একটা আবহাওয়া এবং পরিবেশ থেকে গ্রামের উন্মুক্ত পরিবেশটা সব সময় আমার আকাক্সক্ষা।

সর্বশেষ খবর