বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাদিয়ানিদের জলসায় হামলা আগুন, পুলিশসহ আহত ৩৮

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড় জেলা শহরে মঙ্গলবার রাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খতমে নবুয়তপন্থিদের সহিংস ঘটনায় ৩৮ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭ পুলিশ ও ১২ জন আহমদি (কাদিয়ানী)। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা দাবি করেন, প্রতিপক্ষের দেওয়া আগুনে তাদের দোকানপাট, বাড়িঘর মসজিদ ও স্কুলের কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহতেশাম রেজা। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরের পরিস্থিতি এখন থমথমে। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক ত্রাণ সহায়তা দিতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্ত কাদিয়ানীরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

পঞ্চগড় শহরের আহমদ নগরে ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি আহমদিয়াদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘সালানা জলসা’ (বার্ষিক সম্মেলন) হওয়ার কথা। খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ কমিটি এই আয়োজনের বিরোধিতা করে এবং কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য দাবি জানায়। এ ব্যাপারে তারা সভা-সমাবেশ করে এবং স্মারকলিপি দেয়। তাদের আন্দোলনে স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়েন। খতমে নবুয়তপন্থিরা ঘোষণা দেন, তারা সালানা জলসার কাছাকাছি এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করবেন। অন্যদিকে, কাদিয়ানী নেতারা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন নির্ধারিত তারিখেই জলসা হবে। দুই পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা। জেলা প্রশাসন দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাত হোসাইন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ কমিটির লোকেরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে জড়ো হতে থাকে। বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল করতে করতে তারা এখানে এসে মিলিত হয়। তারা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। ঘণ্টাখানেক পর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। এ দুই জনপ্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে সালানা জলসা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা বিক্ষোভকারীদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু দৃশ্যত তাতে কোনো কাজ হয়নি।

আহমদিয়া মুসলিম জামাতের আঞ্চলিক প্রধান মো. আবদুল মতিন জানান, জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানীদের জলসা স্থলের দিকে এগিয়ে যায়। তাদের করতোয়া ব্রিজের ওপর পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে তারা অন্য পথে লাঠিসোঁটা সজ্জিত হয়ে রাজনগর এলাকার ভিতর দিয়ে করতোয়া নদী পার হয়ে যায় এবং আহমদ নগরে জলসা স্থলে নির্মাণাধীন প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভেঙে দিয়ে আগুন ধরায়। আতঙ্কিত কাদিয়ানীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। পলায়নরত কাদিয়ানীদের ওপর উগ্রপন্থিরা হামলা চালায়। এতে ১২ জন কাদিয়ানী আহত হয়। খতমে নবুয়তের সমর্থকরা মসজিদ এবং একটি স্কুলেও হামলা ও ভাঙচুর করে। ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ আসে বলে কাদিয়ানীরা অভিযোগ করেন। তারা জানান, পুলিশ, বিজিবি ও ফায়ার ব্রিগেড এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান, শহরের করতোয়া ব্রিজের ওপর পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ১৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সর্বশেষ খবর