শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুনে পুড়ল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শিশুর মৃত্যু

আতঙ্ক দুর্ভোগ, সব রোগী অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগুনে পুড়ল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শিশুর মৃত্যু

আগুন লাগার পর রোগীদের বের করে আনা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেড় মাস বয়সী এক শিশুকে স্থানান্তরকালে মৃত্যু হয়েছে। তবে শিশুটির নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয়তলার স্টোর রুমে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের দেয়াল ভেঙে ভিতর থেকে চিকিৎসাধীন থাকা প্রায় ১২০০ রোগীর সবাইকে নিরাপদে পার্শ্ববর্তী অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় রোগীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত স্বজনদের কেউ কেউ রোগী নিয়ে বাসায় চলে যান। অগ্নিকান্ডের পর ধোঁয়ার মাত্রা ছিল অনেক বেশি। রোগীদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণের মাঠে নামিয়ে আনা হয়। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাসপাতালে ছুটে যান। এদিকে রাত সোয়া ১০টায় হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে রাতেই হাসপাতালের সেবা পুনরায় চালুর কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী থেকে স্থানান্তর হওয়া রোগীরা আসতে চাইলে বাধার শিকার হবেন না, তারা আসতে পারবেন। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে ও করণীয় বিষয়ে অবহিত করতে আজ  বেলা ১১টায় রাজধানীর বারিধারায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। মৃত শিশুটিকে পাশের কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান অগ্নিকাে র ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিশু ওয়ার্ডের। দেড় মাস বয়সী একটি শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অগ্নিকাে র কারণে অক্সিজেন মাস্ক খুলে স্থানান্তর করা হয়। পাশের কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে কেয়ার হাসপাতালের জিএম মো. আবদুল্লাহ জানান শিশুটিকে তাদের হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, আগুন নেভাতে তাদের পাঁচটি ইউনিট কাজ করেছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। জানা গেছে, ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালের একটি ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখেন। তিনিই প্রথম ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। তার খবরের পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো সেখানে যায়। তবে শুরুতেই পানি পাচ্ছিল না ওই ইউনিট। পরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পুকুর থেকে পানি তুলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝামাঝি স্থানের স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগীদের হাসপাতাল ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। রোগীরা হাসপাতালের সামনের সড়ক ও মাঠে অবস্থান নিতে থাকে। আগুন লাগার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের আত্মীয়স্বজনরা আসতে শুরু করে। তারা রোগী স্থানান্তরে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে থাকে। রোগীদের কোলে তুলে, কাউকে বেডসহ আবার কাউকে হুইল চেয়ারে করে দ্রুত নামিয়ে আনা হয়। আইসিইউতে থাকা রোগীদেরও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। হাসপাতালের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের হাসপাতালগুলোতেও।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সেখান থেকে রোগীদের সরিয়ে নিতে এবং আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করতে দেখা গেছে। ঢাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতাদের সংগঠনের সভাপতি লিটন বলেন, তারা এখন পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে ৭৫ রোগীকে সরিয়ে নিয়েছেন। এ জন্য তারা কোনো টাকা নিচ্ছেন না। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আড়াই শতাধিক রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। ঢামেকের পরিচালক গতকাল রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এজন্য রোগীদের জরুরি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের তাৎক্ষণিক নির্দেশনাও দেন ঢামেকের পরিচালক। অগ্নিকান্ডের সময় সোহরাওয়ার্দীতে চিকিৎসাধীন ১২০০ রোগীর বাকিদের অন্য হাসাপাতালে নেওয়া হয়েছে। আইসিইউতে থাকা রোগীদের পাশের অন্য হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে। আগুন লাগার পরপরই হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন লাগায় আড়াই শতাধিক রোগী ঢামেক হাসপাতালে আসেন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, গতকাল সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে হাসপাতালের রোগীদের দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। অগ্নিকাে র ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর