শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ আর নেই

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ‘সোনালী কাবিন’-এর এই কবি। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এর আগে রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে কবির ব্যক্তিগত সহকারী আবিদ আজম জানান, প্রথমে চিকিৎসকরা কবি আল মাহমুদকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেন। এরপর রাত ১১টা ৫ মিনিটে তার ‘লাইফ সাপোর্ট’ খুলে নেওয়া হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ওই দিন ইবনে সিনা হাসপাতালে তাকে প্রথমে সিসিইউতে ও পরে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তিনি অধ্যাপক ডা. আবদুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কবি আল মাহমুদ সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সক্রিয় থেকে যিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্?ভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি কবি আল মাহমুদ। তিনি একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আল মাহমুদ। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। তার দাদার নাম আবদুল ওহাব মোল্লা, যিনি হবিগঞ্জ জেলার জমিদার ছিলেন। শিক্ষাজীবনে কবি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাইস্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকু  হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। মূলত এ সময় থেকেই তার লেখালেখি শুরু। সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আসেন। এ বছরই মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে তার কবিতা প্রকাশ হতে থাকে। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করে ঢাকায় আসার পর কাব্য সাধনা শুরু করেন এবং ক্রমে খ্যাতিলাভ করেন। ১৯৫০-এর দশকে যে কজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন আল মাহমুদ তাদের একজন। লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬) ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সম্পাদক থাকাকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর