রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আত্মসমর্পণকারীদের কী হবে

সাখাওয়াত কাওসার ও আরাফাত মুন্না

কক্সবাজারের টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে আত্মসমর্পণের ঘটনা রীতিমতো ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া নিয়েও হচ্ছে নানা আলোচনা। অপরাধ-বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পুলিশ বলছে, আত্মসমর্পণের কারণে দেশে ইয়াবার প্রকোপ কমে আসবে বলে তাদের ধারণা। তবে আগের মামলাগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী সেটি এখনো ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে। আইন-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মসমর্পণ যদি তাদের মুক্তির শর্ত না হয়, তাহলে মামলা চলতে কোনো বাধা নেই। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারীরা স্বাভাবিক জীবনে যাতে ফিরে আসতে পারেন সে জন্য সরকার তাদের একটি সুযোগ দিয়েছে। মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে আজ যে মামলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা হয়তো একটু সহানুভূতি দেখাতি পারি। তবে আগের মামলাগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে।’ নামে-বেনামে সম্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য  সরকারের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে। তারাই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। কেউ পার পাওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইন ও সালিস কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া সমন্বিত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত ছিল। কারণ এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন কর্নার থেকে প্রশ্ন উঠেছে। কিসের ভিত্তিতে তালিকা হলো? তাদের কী সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?-এগুলো স্পষ্ট করা উচিত ছিল। কারণ কিছুদিন আগে জলদস্যু আত্মসমর্পণ কিন্তু প্রশংসা পেয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া ঠিক করা উচিত ছিল। জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ নিয়ে একটি সংস্থা বিভিন্ন সুপারিশ উল্লেখ করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-আত্মসমর্পণকারীরা কোনো সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি থাকতে পারবেন না। তারা জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। বৈধ সম্পত্তি ছাড়া বাকি সব সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করবে। কয়েক দফায় র‌্যাবের কাছে জলদস্যু আত্মসমর্পণ এবং তাদের আগেকার মামলাগুলোর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ নজর লক্ষ্য করা গেছে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন সময় বলেছিলেন, খুন, ধর্ষণের মতো মামলাগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। তবে অন্য মামলাগুলো বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশ নিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। যদিও গতকাল কক্সবাজারে ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণে দেওয়া শর্তে এসবের কিছুই উল্লেখ ছিল না। স্থানীয়দের ধারণা, আপাতত কিছুদিন বিরত থাকলেও তারা পুনরায় পুরনো পেশায় ফিরে যাবেই। তাদের মতে, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার লাইসেন্স দেওয়া হলো।

আত্মসমর্পণেও বিচার আটকাবে না : কক্সবাজারে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণ করা ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সব মামলাই স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। আত্মসমর্পণের পর এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্নে গতকাল আইনজ্ঞরা এমন মন্তব্য করেন। তারা বলেন, আত্মসমর্পণ যদি তাদের মুক্তির শর্তে না হয়, তাহলে মামলা চলতে কোনো বাধা নেই। আত্মসমর্পণকারী সুন্দরবনের জলদস্যুদের মামলাও স্বাভাবিকভাবেই চলছে বলে জানান তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী। মানে তারা অপরাধী, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের মামলা না চলার তো কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় আরও মামলা হবে। সব মামলাই স্বাভাবিকভাবে চলবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে যদি আত্মসমর্পণকারীদের কোনো চুক্তি হয়ে থাকে, যদি মুক্তি পাওয়ার শর্তে তারা আত্মসমর্পণ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়। তবে এখানে ওই ধরনের কোনো শর্ত নেই বলেই জানি। তাই তাদের বিচার চলবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের যে সাত দফা শর্ত রয়েছে, সেখানেই কিন্তু বলা হয়েছে, মামলাগুলো চলবে। সরকার কিন্তু তাদের কোনো নির্দেশনার মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, আইনে মামলা থেকে ছাড় পাওয়ারও সুযোগ নেই। আত্মসমর্পণকারীদের নিজ উদ্যোগেই মামলাগুলো চালাতে হবে। এই আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়াকে সরকারের ভালো উদ্যোগ বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর