বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু

ছাত্র সংগঠনগুলোতে টেনশন

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আগে গতকাল মধুর ক্যান্টিনে ভিড় জমায় ছাত্র সংগঠনগুলো -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি গতকাল শুরু হয়েছে। বিভিন্ন হল থেকে সকাল ১০টায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। পৃথকভাবে ভিপি ও জিএসসহ বিভিন্ন পদে গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মোট ২৯ জন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্যানেল চূড়ান্ত এবং নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে টেনশনে আছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মুহসিন হলে ৪টি, এসএম হলে দুটি, বিজয় একাত্তর হলে একটি, সুফিয়া কামাল হলে একটি, জিয়া হলে ৫টি, জহুরুল হক হলে ৫টি, সূর্যসেন হলে ৫টি, বঙ্গবন্ধু হলে একটি, শামসুন্নাহার হলে দুটি, জগন্নাথ হলে একটি, রোকেয়া হলে একটি এবং অমর একুশে হল থেকে একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা ব্যক্তিগতভাবে হলের বৈধ কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ফজলুল হক মুসলিম হল, স্যার এ এফ রহমান হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও কুয়েত মৈত্রী হল থেকে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।  মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে তেমন সাড়া না থাকলেও ছাত্র-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখোরিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। থেমে থেমে মিছিল করে ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে গতকালও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্রলীগের নেতারা। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঐক্যবন্ধ প্যানেল দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রজোটের নেতারা। আজ বুধবার প্যানেল ভিত্তিক মনোনয়ন সংগ্রহের কথা জনিয়েছেন জাসদের (আম্বিয়া) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল’র সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু। ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাসহ চারদফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম পরিষদ। হলগুলোতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ চললেও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অবস্থানে মুখরিত ছিল মধুর ক্যান্টিন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। এ সময় থেমে থেমে নানা স্লোগান দিতে থাকে তার অনুসারীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৯৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাে র কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ কোনো ছাত্র সংগঠনই অবস্থান নিতে পারেনি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলসহ সব সংগঠনরই সহাবস্থান রয়েছে। হলগুলো তখন শুধুমাত্র ছাত্রদলের দখলে ছিল। এখন প্রশাসন আর ছাত্রদের দখলে রয়েছে।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। এরপর জগন্নাথ হল, এসএম হল, মুহসিন হল ও জসিম উদ্দিন হল থেকে খন্ড  খন্ড  মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে নেতা-কর্মীরা। এ সময় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী তাদের অনুসারীদের নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করলেও দলের পক্ষে কোনো স্লোগান দিতে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পাশাপাশি টেবিলে বসে ঘণ্টা দুয়েক আড্ডা দেন সেখানে।

ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, আমরা এখনো কোনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করিনি। উপাচার্যকে আমাদের দাবিগুলো অবহিত করেছি। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর আমরা দাবি আদায়ে কর্মসূচি দেব।

দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। ‘সম্মিলিত বাস রুট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফাল্গুনী বাসের সভাপতি নুর মোহাম্মদ বাপ্পী। দুপুরে মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অফিসারের কার্যালয় থেকে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এস এম আতা এ রাব্বী। জিএস পদে নিয়েছেন সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা জানান, আমরা সম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রজোটের সঙ্গে আলোচনা করে ২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে ঐক্যবন্ধ প্যানেল ঠিক করব। তবে এখনো আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে একাডেমিক ভবনে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।

ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী সংকটে পড়তে পারে ছাত্রদল : ডাকসু ও হল সংসদ নির্র্বাচনে যোগ্য প্রার্থীর সংকটে পড়তে পারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ডাকসু গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ৩০ বছরের অনূর্ধ্ব কোনো শিক্ষার্থী যদি স্নাতক, ¯œাতকোত্তর, এমফিল বা সান্ধ্যকালীন কোনো কোর্সে অধ্যয়নরত থাকেন তবে তিনি ডাকসু নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন। সংশোধিত এ নিয়মানুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার শীর্ষ চারজনের একজনও ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। বয়স ও ছাত্রত্ব না থাকার কারণে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের অনেক নেতারই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা নেই। তাই নির্বাচনে প্যানেল দেওয়া সম্ভব হলেও যোগ্য প্রার্থী সংকটে পড়তে পারে সংগঠনটি। ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচন হবে ২৫টি পদে আর হল সংসদে হবে ১৩টি পদে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও ১৮টি আবাসিক হল মিলিয়ে কোনো সংগঠন বা জোট সব পদে প্রার্থী দিতে চাইলে ২৫৯ জন প্রার্থী প্রয়োজন। এর মধ্যে মেয়েদের পাঁচটি হলে লাগবে ৬৫ জন প্রার্থী। তবে এ সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির অনেক নেতাই। ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালাতে না পারায় যোগ্য নেতার সংকট রয়েছে। এছাড়া বয়সসীমার কারণে অনেক নেতাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। অন্যদিকে মেয়েদের হলগুলোতে অবস্থা তুলনামূলকভাবে আরও খারাপ। ছাত্রদলের বিশ^বিদ্যালয় শাখায় ২০০৪-০৫ সালের পর থেকে মেয়েদের হলে কোনো কমিটি নেই।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা জেসমিন জুই বলেন, মেয়েদের হলগুলোতে পুর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তবে একটা অংশের দেওয়া যাবে, ১৩ জনের মধ্যে হয়তো ৪-৫ দেওয়া সম্ভব হবে।

নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীর সংকটের কথা স্বীকার করে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, আমাদের বিশ^বিদ্যালয় কমিটিতে ৪৭০ জনের মতো সদস্য আছে। এদের দিয়ে নির্বাচনে প্যানেল দিতে সমস্যা হবে না। তবে বয়সের কারণে যোগ্য প্রার্থীর একটা সংকট হতে পারে। মেয়েদের হলে নিরাপত্তার কারণে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর