বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে একটি ভাষা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে একটি ভাষা

ভাষার নাম রঙ মিরচা। চট্টগ্রামের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় মাত্র ২৫ জন মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। তারাও এই ভাষায় খুঁটিনাটি সব শব্দ বলতে পারেন না। আস্তে আস্তে বিলীনের পথে এই ভাষা। পৃথিবীর পান্ডুলিপি থেকে এভাবে প্রতিদিন একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে কালের গহ্বরে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা সংখ্যালঘিষ্ট ভাষাকে খেয়ে ফেলে। বহুল প্রচলিত ভাষার চাপে কম সংখ্যক ভাষাভাষির ভাষাগুলো হারিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এসব ভাষাভাষি মানুষ নিজেদের মধ্যে কথোপকথনে নিজ ভাষার ব্যবহার করলেও বাইরে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ব্যবহারের তালিকায় থাকা ভাষাতেই কথা বলে। ফলে চর্চার অভাবে মৃত্যু হয় ভাষার। এসব ভাষার সংরক্ষণে গবেষণা করে কাজ করতে হবে। ভাষার সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই গবেষণা করেছে। এর মধ্যে এসআইএলের গবেষণাটিই সবচেয়ে বড় বলা যায়। এসআইএলের পুরো নাম হচ্ছে সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণার ফলাফলে উঠে আসে পৃথিবীতে ছয় হাজার ৯০৯ ধরনের ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে অনেক ভাষা লুকিয়ে রয়েছে, অনেক ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। অনেক ভাষা বদলাতে বদলাতে অন্য রকম হয়ে গেছে। বেশ কিছু ভাষায় গুটিকয়েক মানুষ এখন কথা বলে। পাপুয়া নিউগিনির জনসংখ্যা ৪০ লাখেরও কম, অথচ সেখানে আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে ৮৩২টি। পৃথিবীর বুকে ভাষার ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষা আর্কাইভ তৈরি করছে। এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভাষা আর্কাইভ উদ্বোধন করবেন। সরেজমিন আর্কাইভ ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা ভাষার জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। এ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ভাষা সংরক্ষণের জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা। শুধু কাগজে-কলমে নয় ভার্চুয়ালিও ভাষা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এই আর্কাইভে। অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, ভাষার গতি প্রকৃতিসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের তাগিদে আমরা ভাষা আর্কাইভ তৈরি করেছি। নতুন প্রজন্ম চাইলেই জানতে পারবে ভাষার আদি ইতিহাস। আমরা কেবল শুরু করছি আস্তে আস্তে এই আর্কাইভকে আরও সমৃদ্ধ করব।

সর্বশেষ খবর