শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে ধানের শীষের প্রার্থীরা

২৯ ডিসেম্বর রাতেই ৬০ ভাগ সিল মারা হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম বিষয়ে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীরা বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি শুরু হয়। রাতেই অন্তত ৬০ ভাগ সিল মারা হয়। ভোটের দিন সকাল থেকেই ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর, হুমকি-ধমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। সকাল ১০টার মধ্যেই অধিকাংশ কেন্দ্রে ব্যালটের সংকট হয়। এ সরকারের ভোট ডাকাতি হাতেনাতে ধরা পড়েছে। তবে গণশুনানি করে কতটুকু লাভ হবে জানি না, এ মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বিকল্প নেই। শিগগিরই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করুন। এরপর নতুন নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গতকাল রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর গণশুনানিতে          অংশ নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ধানের শীষের প্রার্থীরা এসব অভিযোগ করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৫৩ দিন পর ভোটে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ শুনতে ধানের শীষের প্রার্থীদের নিয়ে ঢাকায় ‘গণশুনানি’ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে গণশুনানি কর্মসূচি শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। প্রায় আট ঘণ্টা শুনানিতে আমন্ত্রিত দুই শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে সময়স্বল্পতার কারণে মাত্র ৪২ জন নিজ নিজ সংসদীয় আসনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।

গণশুনানিতে জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন সাতজন। তারা হলেন- অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী, সাবেক বিচারক আ ক ম আনিসুর রহমান খান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। কেউ কেউ অনিয়মের লিখিত কপিও জমা দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাে র ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বিএনপি মহাসচিব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং উপস্থিত সবাই নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। মির্জা ফখরুল ছাড়াও অতিথি সারিতে বসে বক্তব্য শোনেন- বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, নিতাই রায়চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুন অর রশীদ, জহির উদ্দিন স্বপন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, মীর নেওয়াজ আলী, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসীন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম, মমিনুর রহমান, আতিকুর রহমান, শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহেদ-উর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। গণশুনানিতে মির্জা ফখরুল ও ড. মঈন খান ছাড়া স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যই উপস্থিত ছিলেন না। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কাউকে দেখা যায়নি অনুষ্ঠানে। ২০-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক অলি আহমদসহ শরিক নেতার অধিকাংশই ছিলেন অনুপস্থিত।

গণশুনানিতে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী রুমানা মাহমুদ পুলিশের গুলিতে দুই চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া মেরি বেগমকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। তিনি মেরি বেগমের হাতে মাইক তুলে দেন। এ সময় মেরি বেগম তার অবর্ণনীয় ঘটনা তুলে ধরলে পুরো মিলনায়তনের প্রার্থী-সমর্থকরা আবেগময় হয়ে পড়েন। মঞ্চে বসা ড. কামাল হোসেনসহ অন্যদের চোখও সজল দেখাচ্ছিল।

মেরি বেগম বলেন, ‘দেশবাসীকে বলব, চোখ হারিয়েছি আমার দুঃখ নাই। কিন্তু সবচেয়ে বড় দুঃখ, আমি ৩০ তারিখে ভোট দিতে পারি নাই। যখন শুনছি ২৯ তারিখে রাত ১২টায় ভোট শেষ হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় কষ্ট হয়েছে তখন আমার। আমি দাবি জানাতে চাই, আমি ভোট দিতে চাই, আমাকে ভোট দিতে দেন নইলে আমার দুই চোখ ফেরত দেন।’

পাবনা-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘এ নির্বাচনে সরকারের চুরি হাতেনাতে ধরা পড়েছে। ২৯ ডিসেম্বর রাত ৯টা থেকেই ভোট কাটা শুরু হয়। রাতেই অন্তত ৬০ ভাগ সিল মারা হয়। আমার কোনো এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গণশুনানি করে কী হবে জানি না, তবে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।’

মাদারীপুর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, ‘আমার আসনে রাতেই ৬০ থেকে ৮০ ভাগ ভোট কাটা হয়ে যায়। মধ্যরাত পর্যন্ত আমি কেন্দ্র পাহারা দিই। শেষ রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট কাটা হয়ে যায়। এখন আমাদের বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে। তাকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।’

গাজীপুর-৩ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় ১৬৯টি কেন্দ্রের মধ্যে একটিতেও স্বচ্ছ ভোট হয়নি। আমার বাড়ির কাছের কেন্দ্রেও ভোট স্বচ্ছ হয়নি। আমার নিজের নামের স্কুলের কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা রিটার্নিং অফিসার খুলে ফেলেন। ২৯ তারিখ শতভাগ কেন্দ্রেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট বাক্সে ফেলা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল-৮ আসনে ধানের শীষের কুঁড়ি সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতেই ধানের শীষের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে এটা বাড়তে থাকে। ভোটের দিন আমার এজেন্টকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। এ নির্বাচনে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, এ সরকার যে চোর ও ডাকাত তা প্রমাণিত হয়েছে। তারা দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে অসম্মান করেছে।’

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আমরা যে বলেছিলাম, দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না তা একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।’

কুড়িগ্রাম-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আমসা-আ-আমিন বলেন, ‘আমার সংসদীয় আসনে ৫ লাখের বেশি ভোট। আগের রাত থেকে শুরু করে ভোটের দিন পর্যন্ত ব্যালটে সিল মারার পরও আমি লক্ষাধিক ভোট পেয়েছি। আমার বাসার সামনে পুলিশ চৌকি বসিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে। আমি জেলায় জেলায় গণআদালত করার দাবি জানাচ্ছি।’

বরিশাল-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আবুল হোসেন খান বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটের গণজোয়ার আমার পক্ষেই ছিল। ২৫ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নামার পরও আমি খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু এর পরই শুরু হয় তা ব। তিনটি ইউনিয়নে আমার সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর আর বুঝতে বাকি নেই, আমাকে জোর করে হারানো হচ্ছে। ভোটের দিন সকাল ৮টায় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সংকট হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নতুনভাবে ভোটের আয়োজন করতে হবে।’

রাজশাহী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর রাত ৯টা থেকে দেড়টার মধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কেটে ব্যালট নিয়ে যান ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তবে আমি মনে করি, ভোট ডাকাতরা পরাজিত হয়েছে, জিতেছে জনগণ।’

যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘ভোটের আগেই আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩টি নতুন মামলা দিয়ে সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায়ই ভোট কাটা শুরু হয়। ভোটের দিন সকাল ১০টার মধ্যেই ব্যালট শেষ হয়ে যায়।’

বরিশাল-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি প্রার্থী। আমাকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা তো পাইনি, বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর হুমকি-ধমকি পেয়েছি। এখন আমাদের একটাই কাজ, সরকার পতন আন্দোলন। এ ছাড়া আমরা কেউ ঘরে নিরাপদে থাকতে পারব না।’

নাটোর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, ‘আমি একজন প্রার্থী। আমার ওপর পরপর দুবার আক্রমণ চালানো হয়। আমার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মেয়েকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার চেষ্টা করে। অথচ প্রশাসন নীরব ছিল। ভোটের দিন সকালেও আমার বাসায় হামলা চালানো হয়। আমাকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু আমার কারাবন্দী স্বামী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে প্রস্তুতও ছিলেন। কিন্তু সরকার জনগণের সেই ভোটাধিকার কেড়ে নেয়।’ পিরোজপুর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছে। পুলিশসহ অন্যরাও ভোট ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে। দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করতে পারলে এসব শুনানি করে তেমন কোনো লাভ নেই। এখন আমাদের একটাই কাজ- আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন।’

নরসিংদী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া আমাদের নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়নি। এখন নতুন নির্বাচনের আগেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’

হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের দেড় মাস আগে থেকে নেতা-কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেন না, হাওরে লুকিয়ে থেকেছেন। দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন এক নেতাকে বাড়িতে পায়নি, তার ১৬ বছরের ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। বলেছে, “তোর বাপ আসলে তোকে ছাড়ব”। এ রকম পরিস্থিতিতে ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি, হয়েছে চুরি, হয়েছে ডাকাতি।’

দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে নোয়াখালী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আমি সবকিছু ভুলতে পারি, আমি সব কিছু। কিন্তু আমার মাকে (বেগম খালেদা জিয়া) মুক্ত করার জন্য আপনারা কেন কর্মসূচি দিচ্ছেন না। কেন ৩১ ডিসেম্বর কর্মসূচি  দেওয়া হলো না? সমস্ত  নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত ছিল। আমি বিনয়ের সঙ্গে মহাসচিবকে বলতে চাই, আর সহ্য হচ্ছে না মাননীয় মহাসচিব। শেষ প্রস্তাব দিয়ে যাই, আজকে গণশুনানি। প্রয়োজনে কৌশলে আমরা কোথাও ভুল করেছি কিনা দলের জন্য একটু শুনানি করা প্রয়োজন।’

এ ছাড়া গণশুনানিতে প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির নিতাই রায়চৌধুরী (মাগুরা-২), জয়নুল আবদিন ফারুক (নোয়াখালী-২), মনিরুল হক চৌধুরী (কুমিল্লা-১০), ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ-৪), মাহমুদুল হক রুবেল (শেরপুর-৩), ডা. শাহাদাত হোসেন (চট্টগ্রাম-৯), শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২), সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল (নরসিংদী-৪), নুরুল ইসলাম আজাদ (নারায়ণগঞ্জ-২), হাবিবুল ইসলাম হাবিব (সাতক্ষীরা-১), আখতারুজ্জামান মিয়া (দিনাজপুর-৪), সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক (ঢাকা-১৪), শাহজাহান চৌধুরী (কক্সবাজার-৪), রুহুল আমিন দুলাল (পিরোজপুর-৩), শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন (জামালপুর-৫), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪), সাইফুল ইসলাম (রংপুর-৬) জেএসডির সাইফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-৩), গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু (ঢাকা-৭), অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (পাবনা-১), নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২), খোন্দকার আবু আশফাক (ঢাকা-১) বক্তব্য দেন।

আট ঘণ্টা শুনানি শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এই নির্বাচনকে নির্বাচন বলা যাবে না। এটা তো নির্বাচন ছিল না, তথাকথিত নির্বাচন। এটা আজকে এই শুনানিতে আমরা বুঝতে পেরেছি, এটা (একাদশ সংসদ) কোনো নির্বাচন হয়নি। ৪২ জনের কথা শোনার পর আমরা বলতে পারি- এটাকে নির্বাচন বলা যায় না, এটাকে বলা যেতে পারে সরকার একটা প্রহসন করেছে, দেশের নাগরিককে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, সংবিধান অমান্য করেছে, গণতন্ত্রের মূলনীতির প্রতি অবমননা করেছে।’

সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী এই প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার মালিক জনগণ। তাদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করার চেয়ে বড় অপরাধ কিছু হতে পারে না। এটাকে আমি বলব, স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বৈরাচার যে ক্ষমতা আত্মসাৎ করে, লুটপাট করে দেশ ধ্বংস করছে, দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করছে, সংবিধান ধ্বংস করছে, মানুষের অধিকার ধ্বংস করছে- তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আমরা একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন হবে আমরা যেন তখন সবাই মিলে দাঁড়িয়ে বলতে পারি- দেশকে আমরা পুনরুদ্ধার করেছি, এ দেশ আমাদেরই, স্বৈরাচারের নয়।’

গণশুনানি থেকে ড. কামাল হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আজকে অনেকে এখানে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছেন। এটা একটি ন্যায্য দাবি। আমরা অন্যান্য প্ল্যাটফরম থেকে এই মুক্তি চেয়েছি। আজকে সবাই এখান থেকে জোরালোভাবে তাঁর মুক্তি চেয়েছেন। আমি অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি করছি।’

সর্বশেষ খবর