রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাসায়নিক গুদাম না সরানো দুঃখজনক

হাসপাতালে দগ্ধদের পাশে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাসায়নিক গুদাম না সরানো দুঃখজনক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল হাসপাতালে দগ্ধদের দেখতে যান

মালিকরা রাজি না হওয়ায় পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নিমতলীতে আগুনের ঘটনার পর আমরা পুরান ঢাকার এই কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে অনেক কারখানা অপসারণ করেছিলাম। কেরানীগঞ্জে আধুনিক গোডাউন করতে জায়গা করে দিয়েছিলাম, প্রজেক্ট নিয়েছিলাম। কিন্তু মালিকরা রাজি হননি। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য, দুঃখজনক। এখন যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে, সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইনস্টিটিউটে চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত্বনা দেন। সেই সঙ্গে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুনে আহতদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। দগ্ধ প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা করে তিনি সহায়তা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। আমরা একটি শোক কর্মসূচি ঘোষণা করব। রবিবার অফিস খুললে কেবিনেট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শোকের ঘোষণা আসবে। তিনি বলেন, আগুনে দগ্ধদের চিকিৎসায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নে আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

পুরান ঢাকার রাস্তা বড় করতে দক্ষিণ সিটির মেয়রকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তাগুলো এত সরু যে সেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোনো উপায় নেই। পুরান ঢাকায় এত গলি যে, আমরা হেলিকপ্টার দিয়েও পানি দিতে পারিনি। এটাও খেয়াল রাখতে হয়েছে যে হেলিকপ্টারের বাতাস থেকেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্ব থেকে হেলিকপ্টারে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ সময় আগুন নেভানোর কাজ বিঘিœত করার জন্য সংবাদকর্মীদের প্রতি দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আগুন নেভানো ব্যাহত হয়েছে। আমাদের জানতে হবে কখন কী প্রশ্ন করা যায়। যখন অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নেভানোয় ব্যস্ত, তখন যদি তাদের প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবেন? এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। আগুন নেভানোর জন্য পানির উৎসের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় এক সময় অনেক পুকুর ছিল। সেগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া খালগুলো উদ্ধার করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় পুরনো ঢাকার ধোলাই খাল ও আশপাশে অনেক খাল ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেগুলো দখল হয়ে গেছে। স্থানীয়রা ভরাট করে ফেলার কারণে ওই এলাকায় দুর্ঘটনার সময় পানি পাওয়া যায় না। আগুন নেভানোর সময় যদি পানি না পাওয়া যায়, তাহলে ফায়ার সার্ভিসের কী করার আছে? আগামীতে খালগুলো উদ্ধার করা হবে। দুর্ঘটনার সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন করার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উদ্ধার কাজ চলাকালে নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন সাংবাদিকরা। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এখন কি প্রশ্ন করার সময়? ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার আগে রোগীর কাছে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, তাকে দেখা ছবি তোলা বন্ধ করতে হবে। এতে রোগীরা ইমোশনাল হয়ে যায়, এতে তাদের ক্ষতি হয়, তাদের ইনফেকশন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে কোনো ঘটনা ঘটলে এত লোক জমে যায় উদ্ধার কাজে যাওয়ার মতো রাস্তা থাকে না, উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। ঠিক সময় উদ্ধার কাজের ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সবাইকে এই বিষয়গুলোতে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। প্রধানমন্ত্রী সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পৌঁছে অগ্নিকান্ডে  আহত রোগীদের খোঁজখবর নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে সাহস পাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা : আগুনে দগ্ধদের চিকিৎসা খরচ বহন ও পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেওয়ায় সাহস পাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন দগ্ধ রিকশা চালক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হাজেরা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিকরা। তিনি জানান, তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রিকশা চালাতেন। তার রোজগারেই চার সন্তানকে নিয়ে কোনোক্রমে টিকে ছিলেন তারা। কিন্তু বুধবার রাতে চুড়িহাট্টার আগুনে আনোয়ার মারাত্মকভাবে দগ্ধ হলে সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, এই তিন দিন আমরা হাসপাতালে আছি। খুব টেনশনের মধ্য দিয়ে দিন পার করতেছিলাম। কীভাবে আমার সংসার চলবে। কল্পনাও করি নাই আমাদের মতো গরিব মানুষ আগুনে পুড়লে প্রধানমন্ত্রী দেখতে আসবে। উনি শরীরে, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিছেন, সাহস দিছেন। সেদিনের আগুনে আয়নার দোকানের কর্মচারী সেলিম মিয়ার (৪০) শরীরের ১৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি বেগম বলেন, আমাদের চার বছরের একটা মেয়ে আছে। পরের মাসেই পরের সন্তান হবে। এর মধ্যে এমন দুর্ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তোমরা কোনো চিন্তা কইর না। আমরা তোমাদের পাশে আছি।

সর্বশেষ খবর