শিরোনাম
রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকসুতে হবে চতুর্মুখী লড়াই

ভিপি ২১ জিএস ১৪ প্রার্থী । সুষ্ঠু পরিবেশ : ছাত্রলীগ ভয়ভীতি হুমকি-ধমকি চলছে : অন্য সব প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ডাকসুতে হবে চতুর্মুখী লড়াই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে এবার চতুর্মুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পাশাপাশি মাঠে সমান্তরালভাবে লড়ছে বাম জোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এর বাইরেও ভিপি, জিএস ও হল ছাত্র সংসদে প্রার্থীর শেষ নেই। এর মধ্যে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লাইমলাইটে চলে এসেছে সাংবাদিক এ আর এম আসিফুর রহমানের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দুবারের সভাপতি আসিফ ভদ্র ও বিনয়ী হিসেবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরিচিত। ভিপি পদে মোট ২১ এবং জিএস পদে ১৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে হলে হলে ছাত্রলীগের পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থীরা ভোট জমিয়ে তুলছেন। জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে সবাই ভোটের পরিবেশ চায়। ছাত্রনেতারা বলছেন, কোনো ধরনের পক্ষপাত মেনে নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কঠোরভাবে তার জবাব দেবে। গতকাল ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। বিকাল ৪টায় ডাকসুর ওয়েবসাইটে ও হলগুলোর নোটিস বোর্ডে এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামবে ডাকসু নির্বাচনে আসা ছাত্র সংগঠনগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে গতকাল দিনভর ক্যাম্পাসে সব প্রার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি ভোট প্রার্থনাও করেন। এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগের পর গতকাল ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের রঙিন পোস্টারের পরিবর্তে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় সাদা-কালো পোস্টার দেখা গেছে। এ ছাড়া ছাত্রমৈত্রীর বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার হলগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে।  এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী ভিপি পদে লড়ছেন।  উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন- ছাত্রলীগের রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রদলের মোস্তাফিজুর রহমান, বাম জোটের লিটন নন্দী, কোটা আন্দোলনের মো. নূরুল হক, জাসদ ছাত্রলীগের শাহরিয়ার সোহাগ শিহাব, স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খান, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এস এম আতায়ের রাব্বী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল লাবিব, এ ডি এম আব্বাস আল কোরেশী, ওমর ফারুক, নকিবুল হাসান, ফাহমিদা মজিদ, আবদুল আলিম, মো. নাইম হাসান, মো. গোলাম রাসেল, রাসেল শেখ, শফিকুল ইসলাম ও শফিক সরকার। জি এস পদে লড়ছেন ১৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী, ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, কোটা আন্দোলনের রাশেদ খান, জাসদ ছাত্রলীগের শাহরিয়ার রহমান বিজয়, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান, জালাল আহমেদ, ফয়সাল মাহমুদ সুমন, মামুন ফকির, রাশেদুল ইসলাম, শাফিকা রহমান শৈলি, শাফি আবদুল্লাহ, সনম সিদ্দিকী প্রমুখ। তবে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়লেও প্রার্থিতা ফিরে পেতে যাচ্ছেন বাম জোটের উম্মে হাবিবা বেনজির ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান। ডাকসু ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মনোনীত ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। জহুরুল হক হলে আমাদের জিএস প্রার্থী সাহাবুদ্দিনকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। একই সঙ্গে সংশয় তৈরি করছে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী মো. নূরুল হক বলেন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একাধিক হলে স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। একজন প্রার্থীকে ১৩ ঘণ্টা আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। এটা অন্য ছাত্র সংগঠনের কাছে শঙ্কার বিষয়। প্রশাসন কিছুটা দ্বিমুখী আচরণ করছে। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের মেয়াদ নেই। তা ঠিক করা হচ্ছে না। এতে তারা ভোট দিতে পারবে কিনা তাও নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। এসব কারণে একটি সংশয় তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। প্রশাসন যদি এমন দ্বিমুখী আচরণ করে তাহলে নিরপেক্ষ ও অবাধ ভোট গ্রহণ হবে না। ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিরাজ করছে। সব ছাত্র সংগঠন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাচ্ছে। ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেখতে উন্মুখ হয়ে আছে।’ ছাত্রদলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ছাত্রদের সামনে আসুক। ছাত্ররাই বেছে নেবে তাদের যোগ্য নেতৃত্ব। হলগুলোতে ছাত্রলীগ কোনো বাড়াবাড়ি করছে না। কাউকে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী ও জহুরুল হক হলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস এখনো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। হলগুলোতেও ছাত্রলীগ কাউকে ভোট চাইতে দিচ্ছে না। ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী শোভন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার টানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। স্যাক্রিফাইস করতে বললেন ছাত্রলীগ সভাপতি : শুক্রবার দিবাগত মধ্য রাতে নিজের কক্ষে ডেকে স্বতন্ত্র ও  কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী প্যানেলের প্রার্থীদের ‘স্যাক্রিফাইস’ করতে বললেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী  শোভন। তিনি ওইসব প্রার্থীকে ভেবেচিন্তে আজ দুপুর ১২টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার কথা বলেন। প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার রাত প্রায় ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তার নিজের (৩৩২ নং) কক্ষে হল সংসদে নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে’র প্যানেলের ৭-৮ জন প্রার্থীকে ডেকে পাঠান। এ সময় ওই কক্ষে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সরকার জহির রায়হান এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, হল সংসদে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী তৌহিদুল হক শিশির ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী হাসান মিজানসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা অবস্থান করছিলেন। প্রার্থীরা রুমে এলে ছাত্রলীগ সভাপতি স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন একটু স্যাক্রিফাইস কর। তোর তো বয়স আছে। আরও নির্বাচন করতে পারবি। একটু চিন্তাভাবনা করে দেখ, কালকে ১২টার আগে...’। এ সময় তার পাশে থাকা অন্য নেতাদেরও ওই প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার কথা বলতে শোনা যায়। একই সঙ্গে আগামীতে ছাত্রলীগের কমিটি ও ডাকসু নির্বাচনে পদ দেওয়ার কথাও বলেন তারা। তবে স্বতন্ত্র ওই প্রার্থী প্রত্যাহার করবেন না বলে জানান এবং কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় কক্ষে থাকা একজনকে ‘সমস্যা নাই, টিকবে না’ বলতে শোনা যায়। এরপর ফোনে আরও একজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তাকেও আজ দুপুর ১২টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেন তিনি। এরপর সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের এক প্রার্থীকেও একই কথা বলেন। চিন্তাভাবনা করে পরে তাকে জানাবেন বলে জানান ওই প্রার্থী। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের হলে নেই ছাত্রদলের প্রার্থী, পূর্ণাঙ্গ দেয়নি কোটা : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মেয়েদের হলে কোনো প্যানেল দিতে পারেনি বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ ছাড়াও জগন্নাথ হলেও কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি সংগঠনটি। কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদও মেয়েদের হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংগঠনটির নারী নেতা-কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে না পারা, সম্ভাব্য প্রার্থী অনেককেই ভর্তির সুযোগ না দেওয়াসহ আরও নানা কারণে এসব হলে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সংগঠন দুটি। ইশা ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে অংশগ্রহণ করছে, এটা আল্লাহপাকের অশেষ রহমত। গতকাল আইএবি মিলনায়তনে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতারা দোয়া নিতে এলে তিনি এ কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, এম হাছিবুল ইসলাম, মুসতাকিম বিল্লাহ হারুন অর রশিদ, ডাকসু ভিপি প্রার্থী আতায়ে রাব্বি, জিএস প্রার্থী মাহমুদুল হাসানসহ প্যানেলের নেতারা।

সর্বশেষ খবর