শিরোনাম
রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃষিজমি ও জলাধার নষ্ট করে স্থাপনা নয় : প্রধানমন্ত্রী

উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন দরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষিজমি ও জলাধার নষ্ট করে স্থাপনা নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য সরকার আলাদা আলাদা বরাদ্দ রাখছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও গবেষণা বাড়ানো দরকার। উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন করা দরকার। তিনি বলেন, এই বরাদ্দ কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রকৌশলীদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তিনি গতকাল বিকালে রাজধানীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৯তম কনভেনশন উদ্বোধন করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করবেন, তা যেন দেশের জলবায়ু উপযোগী হয়। আমাদের দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া, গরম, লোনা এবং আর্দ্রতা সবকিছু মাথায় রেখেই স্থাপনা নির্মাণ করা চাই। প্রকল্প গড়ে তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে তাতে যেন কৃষিজমি নষ্ট না হয়। জলাধারের যেন ক্ষতি না হয়। নদী ও খালবিল বাঁচাতে হবে। এতে পরিবেশ সুন্দর থাকে। তিনি বলেন, প্রকৌশলীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলেই দেশ সাফল্য অর্জন করতে পারছে। উন্নয়ন এখন সারা দেশে দৃশ্যমান। অনেকে বিস্মিত হয়ে বলেন, এত অল্প সময়ে কীভাবে দেশকে এত উন্নত করতে পারলাম! প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের প্রতি আস্থা, ভালোবাসা, তাদের জীবনমান উন্নত করার যে ওয়াদা করেছি আমরা, সেটা রক্ষা করার চিন্তা থাকতে হবে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি সেক্টরকে উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে নিজেরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে চাই। আমরা আর কারও কাছ থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না। এজন্য সরকার ই-গভর্নেন্স চালু করেছে। এখন আর টেন্ডার বাক্স ছিনতাই আর ছিঁড়ে ফেলার গল্প শোনা যায় না। ই-টেন্ডার চালু করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু করা বাকি আছে, ধীরে ধীরে সবক্ষেত্রেই ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। আমরা যাতে আরও উন্নতভাবে কাজ করতে পরি সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আইইবি কনভেনশনের ব্যাজ পরিয়ে দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন আইইবির শিল্পীরা। এরপর কনভেনশনের থিম সং পরিবেশিত হয়। আইইবির প্রেসিডেন্ট, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, আইইবির ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লাহ সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন শিপলু।

অনুষ্ঠানে প্রকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেন প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভুঁইয়া, প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র দাস, মরহুম প্রকৌশলী খিজির খান। এ ছাড়াও শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা কেন্দ্র এবং পাবনা উপকেন্দ্র সনদপ্রাপ্ত হয়। আর শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল বিভাগ হিসেবে আইইবির কম্পিউটার বিভাগ নির্বাচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের ভূখ- খুব সীমিত কিন্তু আমাদের লোকসংখ্যা অনেক বেশি। এই সীমিত ভূমিতে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনমান যাতে নিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যেও কাজ করতে হবে। এদিক বিবেচনায় রেখে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া আমরা হাতে নিয়েছি। ভোকেশনাল ট্রেনিং বা কারিগরি শিক্ষা অতিপ্রয়োজনীয় বলে আমরা মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে শিল্পায়ন যেন দ্রুত হয় সে জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প গড়ে তোলার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়। জলাধারের যেন ক্ষতি না হয়। নদী ও খালবিল বাঁচাতে হবে। এতে পরিবেশ সুন্দর থাকে। তিনি বলেন, আমরা কৃষিকে আধুনিকীকরণ করতে চাই, যান্ত্রিকীকরণ করতে চাই। শিক্ষিত লোকজন যাতে কর্মবিমুখ না হয়, তারা যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারে। এজন্য গবেষণাও দরকার। কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণা দরকার, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশের মাটি মানুষের উপযোগী করে নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। এভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি তা খেয়াল রাখতে হবে, সেটি মাথায় রেখেই উৎপাদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ যেন দ্রুত হয় সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন করেছি। রেলের ডাবল লাইন করেছি। রেলের ক্ষেত্রে সারা দেশে একটি নেটওয়ার্ক করার পরিকল্পনা আছে। মিটারগেজকে ব্রডগেজ করার পরিকল্পনা করেছি। তিনি বলেন, হাইওয়ে করার সময় দেখতে হবে, যেন পাশে জলাধার থাকে। আমাদের প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। আমাদের জলাধার রক্ষা করা দরকার। রাস্তা বা কোনো স্থাপনা নির্মাণের সময় এটি খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা শহরে খাল-পুকুর এখন পাওয়া যায় না। আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। জেলখানার পুকুর থেকে পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে জলবায়ুর মানানসই হাসপাতালসহ ভবন নির্মাণ করতে হবে। বৃষ্টি-রোদ এগুলো লক্ষ্য রেখে স্থাপনা করতে হবে। যেটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি আমাদের দেশের জন্য যথার্থ কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। খাদ্য, পুষ্টি, জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। কোনো কাজ করার আগে আমাদের পরিকল্পনা থাকে। গত পাঁচ বছরে খাদ্যে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় দেশে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে মোবাইল ফোন ছিল না, প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। আমরা ক্ষমতায় এসে প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছি। মানুষের হাতে মোবাইল দেওয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। প্রাইভেট সেক্টরকে আমরা উৎসাহিত করি। তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। বিএনপির আমলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতা হারানোর পর, ২০০১ সাল থেকে দেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন কায়েম হলো। সাত বছর পর আবার আমরা ক্ষমতায় এলাম। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা কীভাবে দেশ গড়ে তুলব তার একটি রোডম্যাপ তৈরি করলাম। আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করলাম, ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করলাম। ২০১৪ সালে ঘোষণা দিলাম, ২০৪১ সালে দেশকে কোথায় দেখতে চাই। নির্বাচনী ইশতেহারেও আমরা এ বিষয়টি রাখলাম। 

এভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাই বিস্মিত। দেশের মানুষের প্রতি একটি রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হয়, মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের ওয়াদা রক্ষা করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, উন্নয়ন করার জন্য প্রতিটি সেক্টরে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। বিএনপির আমলের চেয়ে সাতগুণের বেশি বাজেট বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর