রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি

রাতভর দুই পক্ষের যুদ্ধে নিহত ৬

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

পাকিস্তানে আটক উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পরপরই ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দেশ। জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্ত জুড়ে রাতভর গোলাবিনিময়ে কমপক্ষে ছয়জন সাধারণ নাগরিক ও দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমান্ত এলাকাজুড়ে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে, পাইলট দেশে ফিরে আসায় ভারতজুড়ে চলতে থাকা আনন্দ উৎসবের মধ্যে গতকাল নিরাপত্তা ঘোরাটোপে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন চিকিৎসকরা ও ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। বার্তা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, লাগাতার গোলাবর্ষণে নিহতের মধ্যে আছেন গৃহবধূ, পাঁচ বছরের ছেলে ও নয় মাসের কন্যাসন্তান। গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় বেশ কিছু স্থাপনা। গুলির পাশাপাশি মর্টার ও হাউইতজার ১০৫ মিমি গোলাও ছোড়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে সালোত্রি গ্রামে পাক আক্রমণের তীব্রতা ছিল সব থেকে বেশি। মানকোটে এবং সালোত্রি ছাড়াও পাক হামলা চলছে কৃষ্ণঘাটি ও বালাকোটের দিকে লক্ষ্য করে। গত সাত দিন ধরেই গোলাবর্ষণ চলছে বলে জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। গত এক সপ্তাহে পাক সেনার পক্ষ থেকে অন্তত ৬০ বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনা। বেশির ভাগ ঘটনাই পুঞ্চ, রাজৌরি, বারামুলা ও জম্মুতে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজৌরিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিংহ। তার সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় সেনার হোয়াইট নাইট কর্পস কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পরমজিৎ সিংহ। অন্যদিকে, ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার পর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় অমৃতসর বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিশেষ বিমানে করে দিল্লির পালম এয়ারবাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। রাতেই পালম এয়ারবাস থেকে অভিনন্দনকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির সুব্রত পার্কের এয়ারফোর্স সেন্ট্রাল মেডিকেল এস্টাবলিশমেন্টে। বায়ুসেনার ওই হাসপাতালে রাতেই প্রাথমিক মেডিকেল চেকআপ হয় অভিনন্দনের। পরিবারের সঙ্গে কয়েক মুহূর্তের দেখা হয়। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো কথা বলার সুযোগ হয়নি তার। গতকাল সকালে নাশতার পরপরই মেডিকেল চেকআপ করা হয় তার। এরপর হয় আরও চার-পাঁচ ধরনের পরীক্ষা। আগামী কয়েকদিন ধরেই চলবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

অভিনন্দনকে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা : উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে গতকাল করা হয় সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস টেস্ট (পিএটি), ডিব্রিফিং ও বাগ স্ক্যানিং। এর মধ্যে সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস টেস্টের মাধ্যমে অভিনন্দনের বর্তমান মানসিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। পাক সেনার হাতে আটক হওয়া থেকে শুরু করে পরপর যে ঘটনাগুলো তার সঙ্গে ঘটেছে তাতে কতটা ট্রমায় রয়েছেন তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। পাশাপাশি বিরূপ পরিস্থিতি কীভাবে সামলেছেন, তাকে পাকিস্তানে কোনো মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে কিনা সবকিছুই এ টেস্টের মধ্য দিয়ে জানার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে। অভিবনন্দনকে মানসিক নির্যাতন : ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উইং কমান্ডার অভিনন্দনের ওপর তিন দিন ধরেই টানা মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তিনি তার পাকিস্তানি সেনা হেফাজতে ৬০ ঘন্টা কাটানোর বিবরণকালে এই তথ্য দেন। গোটা সময়ে তাকে একটি পৃথক সেলে একা রাখা হয়। বাইরের জগতের সঙ্গে সংযোগ বন্ধ করতে তার সেলে টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন এমনকি সংবাদপত্রও ছিলনা। আরও জানা গেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করার জন্য তার ওপর রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তাকে যে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে সেলের ভিতর তাকে সেই খবরটুকুও নাকি দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ যে ভিডিওটি প্রকাশিত হয় শুক্রবার রাতে অভিনন্দনের দেশের মাটিতে পা রাখার কয়েক মিনিট আগে প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায়, তিনি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করছেন। ওই ভিডিওটিতে একাধিক ‘কাট’ ধরা পড়ে। এই ভিডিওটি করার জন্যই নাকি তাকে ফেরাতে দেরি হয়ে যায়। দুপুরের বদলে রাতের দিকে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেখে এলেন নির্মলা : ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তিনি গতকাল দুপুরের দিকে দিল্লিতে ‘এয়ার ফোর্স সেন্ট্রাল মেডিকেল এস্টাবলিশমেন্ট’ (এএফসিএমই)-এ গিয়ে অভিনন্দনের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন।

 বলেন নির্মলা। এদিন সেনার পোশাকেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন অভিনন্দন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বিমানবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাও। এ সময় অভিনন্দনের শারীরিক অবস্থা ও তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইং কমান্ডারের প্রশংসা করে বলেন, গোটা দেশ তার বীরত্ব ও দৃঢ়তায় গর্বিত। অভিনন্দনের পাশাপাশি তার স্ত্রী, সন্তান, হাসপাতালের চিকিৎসক ও অন্য কর্মীদের সঙ্গেও কথা হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর।

সর্বশেষ খবর