শিরোনাম
রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পুরান ঢাকার অভিযান

বিচ্ছিন্ন ১৩ ভবনের গ্যাস পানি বিদ্যুৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা অপসারণে গতকাল দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় অন্তত ১৩টি ভবনের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে বকশীবাজারে ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে দুই ঘণ্টার জন্য অভিযান বন্ধ থাকে। এরপর ফের অভিযান শুরু হয়। অভিযানে বাধাদানকারী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, অল্প সময়ের নোটিসে কারখানা ও গোডাউন সরানো কঠিন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বকশীবাজার ও শহীদনগর এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু করে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। এতে বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতরসহ অন্তত ১৪টি সেবা সংস্থা অংশ নেয়। এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দগ্ধ আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এ নিয়ে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে।

ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে চুড়িহাট্টা : দুই দিন আগে রাস্তা খুলে দেওয়ায় স্বাভাবিকতার ছোঁয়া লেগেছে চুড়িহাট্টায়। তবে এলাকাটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও এখনো এক ধরনের দর্শনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। কারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অসংখ্য মানুষ। তারা সেখানে ঘুরে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকানপাট। তদন্তের স্বার্থে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওয়াহিদ ম্যানশনে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকলেও এখন তা প্রত্যাহার করায় অসংখ্য মানুষ ওই ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবিও তুলে রাখছেন।

ডিএসসিসির অভিযান : গতকাল সকালে কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের গোডাউন থাকার অভিযোগে লালবাগের শহীদনগর এলাকার ৮ এবং ২৯ নম্বর রোডের ৩৫, ৩৫/১, ৮, ১১, ৬/এ, ৬/বি, ২৫২, ২৯০/২, ৪২/৫-সহ মোট ৯টি হোল্ডিংয়ের ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বকশীবাজার এলাকার ১৭, ১৬/২/বি, ৮/৩, ১৬/২ নম্বর হোল্ডিং-এ থাকা গোডাউনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় ১৯ এবং ৮/এ নম্বর হোল্ডিং দুটির গোডাউনের মালামাল তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়ায় তাদের অভিযানের আওতার বাইরে রাখা হয়। এ ছাড়া কেমিক্যাল সরিয়ে নেওয়ায় বৃহস্পতিবারের অভিযানে বিচ্ছিন্ন হওয়া ৭৫/২ নম্বর হোল্ডিং-এ পুনরায় ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ দেওয়া হয়। এর আগে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদের নেতৃত্বে বকশীবাজারে অভিযান শুরু করে টাস্কফোর্স। এ সময় সেখানকার জয়চন্দ্র নাগ রোডের ৪টি বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। একই সড়কের অন্য একটি বাড়িতে কেমিক্যাল গোডাউনের সন্ধান পাওয়া গেলে সেখানকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় তাদের বাধা দেন কিছু ব্যবসায়ী। এরপর ওই ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং তাদের তোপের মুখে এক পর্যায়ে অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় টাস্কফোর্স। পরে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ওয়াসা, ডিপিডিসির প্রতিনিধিরা নগর ভবনে ফিরে আসেন। অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, বকশীবাজার এলাকায় জয়চন্দ্র নাগ রোডের ১৭ নম্বর বাড়িতে অভিযানের জন্য গেলে মালিক মোতালেব লোকজন নিয়ে বাধা দেন। পরে তারা নগর ভবনে চলে আসেন। দুপুরে বিষয়টি জেনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নগর ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের একটি টিম সকালে বকশীবাজারে গিয়েছিল। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অভিযানে বাধা দিয়েছে। রাসায়নিকের মজুদ আছে বা অবৈধ গোডাউন আছে এরকম ভবন-স্থাপনা চিহ্নিত করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করি। ঝুঁকি এড়াতে ভবনগুলোর গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আমাদের সহযোগিতা করেনি। এখন আমি নিজেই সেখানে যাব। যে কোনো মূল্যে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পরে বেলা আড়াইটার দিকে মেয়রের নেতৃত্বে বকশীবাজারে জয়চন্দ্র নাগ রোডে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণে পুনরায় অভিযান শুরু হয়। এ সময় তালিকা ধরে সেখানে থাকা কেমিক্যাল গোডাউনের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর বিকাল ৩টার দিকে প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মেয়র সাঈদ খোকন। বৈঠকের আগে তিনি বলেন, আমরা কোনো গোডাউনের মালামাল জব্দ করছি না। কাউকে সাজাও দিচ্ছি না। আমরা কেবল হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করছি। ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই গোডাউনের বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।   

আরও একজনের মৃত্যু : গতকাল সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে দগ্ধ জাকির হোসেন (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। আগুনে তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। বার্ন ইউনিটে আরও দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন সেলিম (৪৪) ও মাহমুদুল (৫২)। সেলিমের দেহের ১৪ শতাংশ এবং মাহমুদুলের দেহের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের দুজনকেই আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর