মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শুরু ওবায়দুল কাদেরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শুরু ওবায়দুল কাদেরের

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গতকাল ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরের অ্যারোস্পেস রোডের সেলেটর বিমানবন্দরে অবতরণ করে ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখান থেকে সরাসরি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ডক্টর ফিলিপ কোহর সিয়াম সুন-এর তত্ত্বাবধানে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা চলছে।

মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত ওবায়দুল কাদের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পৌঁছেছেন- এমন খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন শতাধিক বাংলাদেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভিড় সামলাতে এ সময় হিমশিম খেতে হয়। ওবায়দুল কাদেরের উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বিকাল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তাকে নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। রাত ৮টার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সেলেটর বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। এর আগে বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনারি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (সিআইসিইউ) থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী সিঙ্গাপুরের পথে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যান। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও দলের উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিমানবন্দরে দলের সাধারণ সম্পাদককে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন। রবিবার সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে এনজিওগ্রামে তার হৃৎপিে র রক্তনালিতে তিনটি ব্লক থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে গতকাল দুপুরে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয় দেশটির প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠীকে। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি সিঙ্গাপুর এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা জানান বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, ভারতের নামকরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠী ওবায়দুল কাদেরকে দেখেছেন। সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পর তিনি মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেবী শেঠী বলেছেন, আপনারা যে চিকিৎসা দিয়েছেন, চমৎকার চিকিৎসা হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা হলেও একই চিকিৎসা হতো। এই রোগে এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ওনার অবস্থা কালকের চেয়ে মোটামুটি ভালো। তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। কালকের চেয়ে অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে তাকে আজ শিফট করা যেতে পারে। কারণ, এর চেয়ে অবস্থা খারাপ হলে তখন আর শিফট করা যাবে না। কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তার এখনো ঝুঁকি আছে। তবে এ অবস্থায় চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে শিফট করা যাবে। ওবায়দুল কাদের ঝুঁকিমুক্ত কি না জানতে চাইলে কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তার ডায়াবেটিস অনিয়মিত পরীক্ষা করা হতো। আগেও হার্ট অ্যাটাক করেছিল। এরপর ঠিকভাবে শরীর চেকআপ করা হয়নি। তার রক্তে ইনফেকশনের ব্যাপার আছে। সেটাও বেড়ে গেছে। তাকে শিফট করার এখনই ভালো সময়। কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদেরকে উদ্দেশ করে ডা. দেবী শেঠী বলেছেন, ‘ইউ আর ভেরি লাকি’। তার সব চিকিৎসাই এখানে দেওয়া হয়েছে। আপনার স্বামী এই জটিল মুহূর্তে এখানে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ) যে চিকিৎসা পেয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা পেতেন না। সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আহসান বলেন, সকাল ৯টার পর থেকে তার অবস্থা স্থিতিশীল। প্রেশার ১১০ থেকে ৭০ হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ১২০-১৩০ হচ্ছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্সের যে বিষয়টি ছিল, সেটাও এখন নরমাল। তার হাই ব্লাড সুগার ছিল, তাও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

রাতে সিঙ্গাপুর গেলেন ৫ জন : ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে গেলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম নাজু, ওবায়দুল কাদেরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের টিপু, সহকারী একান্ত সচিব আবু তাহের মো. মহিদুল হক।

আপনি ডাকলেই চলে আসব-প্রধানমন্ত্রীকে দেবী শেঠী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠী। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ সময় দেবী শেঠী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক মানদ  অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন। বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং যে কোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে ডাকলে, অর্ডার দিলে তিনি বাংলাদেশে ছুটে আসবেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দেবী শেঠীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জানান, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেবী শেঠীর সাক্ষাৎ হয়েছে। গত (রবিবার) রাত ১টায় যখন দেবী শেঠীকে আমি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাই, তখন তিনি সম্ভব হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার ইচ্ছার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি সম্মতি দেন। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী দেবী শেঠীকে বলেন, তার জন্য হোটেল বুকিং করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশে দু-এক দিন থেকে বেড়িয়ে দেখার কথা জানান। ডা. জামান আরও জানান, স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে এসে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে গতকাল বিকালেই ভারতে ফিরে গেছেন ডা. শেঠী।

সর্বশেষ খবর