মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসলে কী হবে ডাকসুতে

সহাবস্থানের আশ্বাস ভিসির, বক্তব্যের সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো, উৎকণ্ঠা অব্যাহত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

আসলে কী হবে ডাকসুতে

উৎকণ্ঠার শেষ হচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ছয় দিন। কিন্তু ভোটের পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কতটা রক্ষা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় কাটছে না সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের। সময় যত ঘনিয়ে আসছে সংশয়ও তত বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো রকম জটিলতা তৈরি হলে কেউই তা মেনে নেবে না। এর মধ্যে উপাচার্য গতকাল আরেক দফায় সবাইকে আশ্বস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু উপাচার্যের কাছে বক্তব্যের সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই পাননি ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা। লিখিত বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত হয়েও তা জানাতে পারেননি বাম জোট ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। তবে এত কিছুর পরও গতকাল সকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নেমেছেন স্বতন্ত্র ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মনোনীত প্রায় সব প্রার্থী।

নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অনেক শঙ্কা, সন্দেহ ও বিতর্কের পথপরিক্রমায় প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দল-মত নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করছেন।’ দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন একেবারেই ত্রুটিমুক্ত নয় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন ভুলত্রুটি হয়তো রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহাবস্থান তৈরিতে সাহায্য করায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ দিয়ে তা সব সময় অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। বক্তব্য পাঠ শেষে সবাইকে চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন উপাচার্য। উপস্থিত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সহাবস্থান ও সমান সুযোগের কথা বলা হলেও তা মেনে চলা হচ্ছে না। এসব বিষয়ে উপাচার্য তাদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে গেছেন। অনেকেই উপাচার্যকে বলার জন্য লিখিত বক্তব্য এনেছিলেন। কিন্তু তাদের কথা শোনা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ছাত্র বাম জোটের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী লিটন নন্দী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য দিতে না দেওয়া এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিকতার প্রকাশ। আমাদের কথা না শুনেই উপাচার্য মহোদয় তার লিখিত বক্তব্য পড়ে উঠে গেলেন। ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করা, বুথ সিসিটিভির আওতায় আনা ইত্যাদি নানা দাবির বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। এই বিষয়গুলোতে প্রশাসনের নজর দিতে হবে।’ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরু বলেন, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী একত্র হয়েছিলেন। নির্বাচন পরিচালনায় নিযুক্ত অনেক কর্মকর্র্তাও ছিলেন। কিন্তু প্রার্থীদের কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই উপাচার্য স্যার চলে গেলেন। আমরা এ ঘটনায় হতাশ। এটা আমাদের মনে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি করেছে।’

উপাচার্যের বক্তব্য প্রদান অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে প্রচারণায় নেমেও তা বন্ধ রাখে ছাত্রদল। এ বিষয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সাময়িকভাবে প্রচারণা বন্ধ রেখেছিলাম। তবে এখন হলগুলোতে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে ব্যালট নম্বর দেওয়াকে কেন্দ্র করেও।  গতকাল বিকালে প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর দেওয়া হলেও এর আগেই কতিপয় প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যালট নম্বর উল্লেখ করে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। কিন্তু ব্যালট নম্বর না থাকায় লিফলেটই ছাপাতে পারেনি বেশির ভাগ সংগঠন। এ বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন, ‘তারা অনুমান করে এটা করতে পারে। আমরা এ বিষয়ে অবগত নই।’

আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় প্রার্থীরা : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণায় নামে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির (ভিপি) সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ও সহ-সভাপতি (এজিএস) প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন মধুর ক্যান্টিন থেকে প্রচারণায় নামেন। তারা সংগঠনটির প্যানেল নিয়ে কলা ভবন, আইবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও মলচত্বর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেন। এ ছাড়া হল সংসদসমূহে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন। সংগঠনটির সার্বিক প্রচারণার বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। তারাও আমাদের ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সব মিলিয়ে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ ছাত্রলীগের প্যানেলে নারী ও প্রতিবন্ধীদের স্থান দিয়ে সংগঠনটি নৈতিকভাবে বিজয় অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সকালে প্রচারণা শুরু করে ছাত্রদলও। দুপুরের আগে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পর সংগঠনটির ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও জিএস পদপ্রার্থী আনিছুর রহমান অনিকের নেতৃত্বে আবারও প্রচারণা শুরু করে করে তারা। তবে লিফলেট ছাড়াই ক্যাম্পাসে প্রচারণা করতে হয়েছে ছাত্রদলকে। এভাবে প্রচারণা প্রসঙ্গে ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় আমরা লিফলেট ছাপাতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ছাত্রলীগকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য ব্যালট নম্বর দেয়নি। প্রচারণা শুরুর আগেই তারা প্রচারণা করছে, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরু এবং জিএস প্রার্থী রাশেদ খান সকাল থেকেই নির্বাচনের প্রচারণায় নামেন। ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে তারাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বদলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন তারা। অন্যদিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে নিজেদের প্রচারণা শুরু করেছে বামপন্থি জোট। প্যানেলটির ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে টিএসসি, কলা ভবন, আইবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও মলচত্বর এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। জোটের প্রচারণার বিষয়ে লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি চাই, কোনো প্রভু চাই না। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। তারাও আমাদের ভালো সাড়া দিচ্ছেন। আমরা একটি ভালো ফল প্রত্যাশা করছি।’ এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও হলগুলোর স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নিজেদের হলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভোট প্রার্থনা করছেন তারাও। আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফুর রহমানও আছেন প্রচারণার মাঠে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বিজয় নিশ্চিত বলে জানান আসিফুর রহমান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর