বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, গেস্টরুম নির্যাতন বন্ধের অঙ্গীকার

আকতারুজ্জামান

ডাকসু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তৎপরতাও বেড়েছে প্রার্থীদের। নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিভিন্ন পরিষদ, প্যানেল, জোট থেকে নির্বাচন উপলক্ষে তুলে ধরেছেন নির্বাচনী ইশতেহারও। ছাত্র-ছাত্রীদের নানা সমস্যার সমাধানসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ, গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন প্যানেল, জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ সমর্থিত শোভন-রাব্বানী-সাদ্দাম পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহারে মেধার ভিত্তিতে হলের সিট বরাদ্দ, প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। বহিরাগত, অছাত্রদের ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে না রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এ পরিষদ। এ ছাড়া ক্যান্টিনে মানসম্মত খাবার নিশ্চিত, ফাও খাবার বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীবান্ধব নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্র সংগঠনের এ পরিষদটি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি হলে ফ্রি ওয়াইফাই জোন, লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশন, স্বাস্থ্যসেবার আধুনিকায়ন, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধে প্রতিরোধ সেল গঠন ইত্যাদি। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনোনীত নুরুল-রাশেদ-ফারুক প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানসহ গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো. নূরুল হক নূর বলেন, ‘হলে বৈধ শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারও থাকার অধিকার নেই। ছাত্রীরা নানা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত কোণঠাসা। ক্যাম্পাস নানা সমস্যায় জরাজীর্ণ। আমরা বিজয়ী হয়ে এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই।’ স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে চষে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাস। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে ছাত্রীদের নানা আপৎকালীন সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। আসিফুর রহমান বলেন, ‘মেয়েরা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যায় থাকেন, যেগুলো সচরাচর অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চান না। আমি মেয়েদের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করতে চাই। এ ছাড়া কোনো ছাত্রকে সিনিয়র নামধারী দুর্বৃত্ত যেন গেস্টরুমে নিয়ে নির্যাতন করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে চাই। কোনো শিক্ষার্থীই টাকা খরচ করে এসে এই নির্যাতনের শিকার হতে পারেন না। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমার পক্ষে তাদের মত দেবেন।’ নিরাপদ ক্যাম্পাস ও শিক্ষার স্বাধীনতার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মোস্তাফিজ-অনিক-সোহেল পরিষদ প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। ইশতেহারে আধিপত্য ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত, আবাসন সমস্যা সমাধান, প্রথম বর্ষ থেকে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট সমাধানে বাসের সংখ্যা ও রুট বৃদ্ধি, ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ রোধ, শিক্ষায় ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্রদল। প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত লিটন-ফয়সাল-সাদিক পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহারে সন্ত্রাস-দখলদারিমুক্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাসকদের অনুগামী প্রতিষ্ঠান নয়, হবে মুক্তচিন্তা চর্চার কেন্দ্র। এ ছাড়া গেস্টরুম-গণরুমে ছাত্র নির্যাতন বন্ধ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলেছেন এ পরিষদের প্রার্থীরা। মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন, ক্যাম্পাসে ও হলে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের কথা বলেছেন তারা। এ পরিষদের নির্বাচনী স্লোগানে রয়েছে- ‘দ্যাখো, আলো এবং অন্ধকার দুটি পক্ষ, দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?’ বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর রাসেল-শিতি-রহমত পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র জোট থেকে অরণি-শাফী-অমিত প্যানেল হল থেকে অবৈধ ছাত্র উচ্ছেদ, ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ায় চাঁদাবাজি বন্ধ, নানা অযৌক্তিক ফি বাতিলসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছে।

সর্বশেষ খবর