বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাহালম কাণ্ডের দায় দুদককেই নিতে হবে : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরাধ না করেও টাঙ্গাইলের জাহালমের তিন বছর কারাভোগের দায় দুদকের নিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। গতকাল দুদকের দাখিল করা হলফনামার ওপর শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে। ওই ঘটনা নিয়ে দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে ‘যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না, সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই’ বলেও মন্তব্য করে আদালত। এর আগে মঙ্গলবার জাহালমের ঘটনায় দুদক হলফনামা আকারে ব্যাখ্যা দাখিল করে হাই কোর্টে। গতকাল শুনানি শেষে জাহালমের (সালেক) বিরুদ্ধে দুদকের করা সব মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)-সহ যাবতীয় নথিও চেয়েছে হাই কোর্ট। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই মামলায় পক্ষভুক্ত করার আবেদন গ্রহণ করে আদালত জাহালমকান্ডে  সম্পৃক্ত বাকি ব্যাংকগুলোকেও পক্ষভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে দুদককে। আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে তা আদালতে নিয়ে আসতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুনানিতে জাহালমের ঘটনায় দুদক কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা খুরশীদ আলম আদালতে তুলে ধরতে চাইলে আদালত বলেন, ‘কোনো স্টেপ নেননি। ১৬৪ ধারায় এক আসামি যে জবানবন্দি দিয়েছে, সেটা কেন চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। হাউ ডেঞ্জেরাস!’ খুরশীদ আলম তখন বলেন, একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলাগুলোর অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে জমা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার চেয়েও বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়।

খুরশীদ আলম হলফনামা থেকে তথ্য তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাক্ষীরা জাহালমকে সালেক বলে শনাক্ত করেন। তবে অধিকতর তদন্তে জানা যায়, প্রকৃত আসামি সালেকের বাড়ি ঠাকুরগাঁও। আদালত তখন দুদক আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, কবে দুদক জানতে পারল যে জাহালম সালেক নন। উত্তরে খুরশীদ আলম বলেন, ‘গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জানতে পেরেছি। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে জাহালমের বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর জাহালম যে নির্দোষ সে বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। সে তদন্তে জাহালম যে নির্দোষ তা উঠে আসে। তদন্তে দেখা গেছে যে, সে অভিযুক্ত নয়। তাই আমরা তো বিষয়টি নিয়ে সঠিক পথেই আছি।’

আদালত তখন বলে, ‘চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কী করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না সেই বিড়াল থাকার দরকার কী?’ জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে।’

আদালত তখন জানতে চায়, ‘কবে আপনারা জানলেন জাহালম নির্দোষ আর কবে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেন?’ খুরশীদ আলম তখন বলেন, অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন তিনি আদালতে নিয়ে এসেছেন। এগুলো সবই তিনি আদালতে জমা দেবেন। আদালত তখন দুদক আইনজীবীকে বলেন, ‘যখন আপনারা জানতে পারলেন জাহালম নির্দোষ, তখন আপনাদের উচিত ছিল জাহালমের জামিনের ব্যবস্থা করা। জাহালম বলে আসছে, সে নির্দোষ। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর দায় আপনাদের নিতেই হবে।’

‘যখন জানতে পারলেন সে নিরপরাধ। জানার পরও কেন তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না? এটার দায় আপনাদের নিতে হবে।’ দুদকের আইনজীবী তখন বলেন, জাহালমকে যে ২৬ মামলার আসামি করা হয়, সে সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনার ৩৩টি মামলার সব কাগজপত্র আদালতে জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত বলে, ‘আমরা সব দেখব। এই যে ভুলভাবে মামলার আসামি করলেন এটা স্পেসিফিকভাবে হলফনামায় নাই কেন।’ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেব, সব দেব। সবাইকে পার্টি করব। চার্জশিট দেব।’ আদালত তখন বলে, ‘পিক অ্যান্ড চুজ করছেন? ১৩টা চেক তো ইসলামী ব্যাংকের। কতগুলো ব্যাংক অফিশিয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন? এটা দেখা দরকার। আমরা তো দেখছি ব্র্যাক ব্যাংকের যাকে আসামি করার তাকে সাক্ষী বানিয়েছেন। ১৮টি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করবেন। ‘মিস্টার খান, এটি প্রমাণিত যে দুদক প্রোপার ইনভেস্টিগেশন করেনি।’

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবুড়িয়া গ্রামের জাহালম নরসিংদীর একটি পাটকলে কাজ করতেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সেখানে। ২০১৬ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলার আসামি ‘আবু সালেক’ হিসেবে গ্রেফতার করা হয় জাহালমকে। জাহালমের ভাষ্য, তখন তিনি বার বার বলছিলেন যে তিনি সালেক নন, কিন্তু তাতে কান দেননি দুদক কর্মকর্তারা। বিনা অপরাধে জাহালমের কারা বাসের ঘটনা গণমাধ্যমে দেখে তাকে মুক্তি দিতে আদেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশে গত মাসে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কীভাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি কারাগারে গেলেন এবং তার দায় কার, এখন তা বের করতে চাইছে আদাল

সর্বশেষ খবর