শিরোনাম
শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুলতানের কী হবে

আরাফাত মুন্না

সুলতানের কী হবে

গণফোরামের মনোনয়নে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হলেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই। দল থেকে বহিষ্কারও হলেন। ফলে এখন তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি থাকবে না, এমন প্রশ্নই সব মহলে। আইন বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ সংসদ সদস্যদের মতে, সংবিধান ও নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিধান রয়েছে। সেখানে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকা নিয়ে কোনো সমস্যাই দেখেন না তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দল থেকে পদত্যাগ করলে এমপি পদ হারাতে হবে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে কী হবে তা উল্লেখ নেই। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ করলে বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া সম্পর্কিত বিধান আছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে। এতে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে। তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

আবার সংবিধানের ৬৬(১) অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারা অনুযায়ী এমপি প্রার্থী হতে এবং পদে থাকতে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। সংবিধানের একই অনুচ্ছেদ এবং সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৭৮ অনুযায়ী, কোনো সাংসদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্পিকার তা নিষ্পত্তির জন্য বা অধিকতর শুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে শপথ নিতে তার কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, এখানে তিনি যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সে দল তো সংসদে নেই। তাই তার বিষয়ে সংসদের বাইরের কোনো দল স্পিকারের কাছে কোনো কথা বলারও অধিকার রাখে না। তার বিষয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে কি না, এমন প্রশ্নে শফিক আহমেদ বলেন, সরকারি দলের এমপিরা কোনো ইস্যুতে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তখন ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে। তাদের সদস্য পদ থাকবে না। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে ৭০ অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শপথ না নেওয়া অন্যায় বলেই মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুলতান মনসুর গণফোরামের প্রার্থী হলেও তিনি নির্বাচন করেছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। তাই গণফোরাম তাকে বহিষ্কার করলেও সংসদ সদস্য পদ হারাবেন কি না সে বিষয়টি একটু জটিল।

এ ছাড়া কাউকে বহিষ্কার করলে সদস্য পদ চলে যাবে, সংবিধানে এমন কোনো বিধানও নেই। তিনি বলেন, এর পরও যদি কোউ স্পিকারের কাছে কোনো অভিযোগ করেন, তাহলে সংসদের আইন শাখা বিষয়টি বিশ্লেষণ করবে। প্রয়োজেন স্পিকার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনেও পাঠাতে পারেন। তার বিষয়ে ৭০ অনুচ্ছেদও প্রযোজ্য হবে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক এ সংসদ সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সুলতান মনসুর মৌলভীবাজার-২ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থিতা করে বিজয়ী হন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিএনপি ওই নির্বাচনে ছয়টি আসনে বিজয়ী হয়। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট। জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী আটজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নিয়েছেন সুলতান মনসুর। সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের আরেক প্রার্থী মোকাব্বির খানও শপথ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর