রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

খালেদার স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

খালেদার স্বাস্থ্য নিয়ে উৎকণ্ঠায় বিএনপি

সম্প্রতি নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজিরার সময় আদালত কক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তখন বেগম জিয়া দলের মহাসচিবকে জানান, ‘তার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। থেরাপি দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা। কারাগারে কিডনি, লিভার কিংবা রক্তেরও কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না।’

বিএনপি প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। সেখানে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। করণীয় নিয়েও কথা বলেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এরপর বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি মানববন্ধনের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে দলটি। জানা যায়, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ‘নির্জন’ কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আজ ৩৯৮ দিন। নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত ৭২ বছর ঊর্ধ্ব সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তাকে নিয়ে এত দিনেও রাজপথের ‘শক্ত’ কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপির হাইকমান্ড। অথচ তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা চান জোরালো কর্মসূচি। সর্বশেষ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু ছোটখাটো কর্মসূচিতেই রয়েছে দলটি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি গণশুনানিতে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যেও কঠোর কর্মসূচি দিতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এটা যেহেতু রাজনৈতিক মামলা। তাই আমাদের রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া রাজনৈতিক মামলায় মুক্তি মিলবে না। এখন আমাদের দল পুনর্গঠন করে রাজপথেই নামতে হবে।’ বেগম জিয়ার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দুই প্রক্রিয়ায় আমরা এগোচ্ছি। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করে যাচ্ছি। তবে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথ গরম করলে আইনি প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। আমরা রাজপথ গরম করতে পারছি না বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাওয়ার পথও সুগম হচ্ছে না।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড বেগম জিয়াকে দেখতে গিয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া রিউমেটরিটক আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস ম্যারিটা, হাইপারটেনশন, অস্ট্রিও আর্থারাইটিস, টানেল সিসেড্রাম, ফ্রোজেন স্লোডার, লাম্বার স্টোনাইসিস, থাইটিকা, ক্রনিক হাইপো নিথ্রেমিয়া এবং ক্রোনিক কিডনি রোগে ভুগছেন। কয়েকটি রোগ আগে থেকেই ছিল। আবার কিছু নতুন করে হয়েছে। তার নিয়মিত বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। বিএনপিরও দাবি এটি। দলের নেতারা বলছেন, বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। প্রয়োজনে দল তার চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করবে। দলের নেতাদের অভিযোগ, সুচিকিৎসার অভাবে বেগম জিয়ার অসুস্থতা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে। তাকে ফেলে রাখা হয়েছে গুমোট-স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত একটি নির্জন কারাগারে। এরপরও সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতারা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও বিবেকবর্জিত কটূক্তি ও ব্যঙ্গ করে যাচ্ছেন। এটা কেবল মনুষ্যত্বহীন বিবেকবর্জিত মানুষদের দ্বারাই সম্ভব। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেগম জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য দ্রুত ভর্তি করার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকৎসা করা হবে। তাছাড়া তার সুচিকিৎসার জন্য হাই কোর্টেরও নির্দেশনা রয়েছে। তারপর প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললেও  কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। আদালতের নির্দেশ ও মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এখনো কার্যকর হয়নি।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যে রোগগুলোতে ভুগছেন তা অত্যন্ত মারাত্মক। তার বয়স ৭৩ এর পথে। এই বয়সে এই রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর না করা হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে। সরকার কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে। গত সাড়ে তিন মাসে তার কোনো রকম রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড-সুগার টেস্ট বা এক্সরে করা হয়নি। তার কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যদের ঠিকমতো দেখা করতে দেওয়া হয় না। সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে ক্রমেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সব মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকা এক অসহায় নারী। মনে হয় এভাবে তাকে তিলে তিলে হত্যারই ষড়যন্ত্র করছে সরকার।’

সর্বশেষ খবর