সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নির্বাচনে যত ফ্যাক্টর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ডাকসু নির্বাচনে কাজ করবে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর। তবে চতুর্মুখী লড়াই হওয়ারই সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের পাশাপাশি, কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাম জোটসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন আলোচনায়। সব মিলিয়ে আজকের নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থীদের নানা ফ্যাক্টর পার হয়েই আসতে হবে।

তথ্যমতে, গত ১০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিভিন্ন হলেও সিংহভাগ শিক্ষার্থী এখন ছাত্রলীগকে সমর্থন করে। সে হিসেবে ছাত্রলীগ মনে করছে তাদের বড় একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে যে, রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত সব শিক্ষকই সরকারি দলের সমর্থক। এতে ছাত্রলীগ বিশেষ সুবিধা পাবে বলে তাদের ধারণা। এদিকে গত বছর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে গড়ে তোলে দুর্বার আন্দোলন। এ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই আন্দোলনকারী নেতারাই এবার প্রার্থী হয়েছেন ডাকসু নির্বাচনে। ফলে ছাত্রলীগের চ্যালেঞ্জ এখন মূলত কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীরাই। তবে জনপ্রিয় কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গেও ছাত্রলীগের প্রার্থীদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হচ্ছে আজ।

এদিকে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত এ প্যানেলের প্রার্থীরা মনে করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্যানেলের পক্ষে থাকবে। কেননা নিকট অতীতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্দোলনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাম জোটের নেতা-কর্মীরা। স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির এক নেতা সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন। সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে এ প্রার্থীর রয়েছে জনপ্রিয়তা। তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার, দাবির ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে ছিলেন।

এদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের উপস্থিতি ছিল না। তবে বিএনপির সহযোগী ছাত্রসংগঠন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সমর্থন রয়েছে। তাই তারাও ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ছাত্রদের চেয়ে ভোটার সংখ্যা বেশি ছাত্রী হলগুলোতে। সেখানে ছাত্রলীগের আধিপত্য ছাত্র হলগুলোর তুলনায় কম। সে হিসেবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে যাদের পাশে পাওয়া যায় সেদিকেই ভোট দেবেন এই ছাত্রীরা।

এ ছাড়াও ডাকসু নির্বাচনে আরেকটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে আঞ্চলিক ছাত্র সমিতিগুলো। বিভিন্ন জেলা সমিতি, বিভাগীয় ছাত্রসমিতির ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ। তাদের অনেকের কাছে ছাত্রসংগঠন থেকে এলাকা প্রাধান্য পাচ্ছে।

হল সংসদ এবং কেন্দ্রীয় সংসদ মিলে ছাত্রলীগের প্যানেলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা সর্বমোট ২৫ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের মধ্যে ছয়টি পদে নারী প্রার্থী রয়েছেন। ক্রিয়াশীল বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন প্যানেলে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের প্যানেলেও রয়েছে নারী প্রার্থী। সব মিলে নারী ভোটাররা এ প্রার্থীদের একটি বড় ভোট ব্যাংক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফ্যাক্টর ৭০টি গণরুমের ভোট : ডাকসু নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে আবাসিক হলের ৭০টি গণরুমের ভোট। সূত্র মতে, ছাত্রদের হলগুলোতে থাকা ৭০টি গণরুমে অবস্থান করছে প্রায় তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী, যাদের সবাই ভোটার। গণরুমের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রায় সব প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দাবি, গণরুমের শিক্ষার্থীদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা ছাত্রলীগের প্রার্থীদের জন্য শুরু থেকেই প্রচারণায় মাঠে ছিল। ছাত্রলীগকেই ভোট দেবে তারা। তবে ছাত্রদল, বামজোটসহ অন্য প্রার্থীরা বলছেন, গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের জোর করে ছাত্রলীগের প্রচারণায় নামানো হয়েছে। হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে থাকায় তাদের পক্ষে না নেমে উপায় নেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের। প্রচারণায় নামতে বাধ্য হলেও ছাত্রলীগকে তারা ভোট দেবে না।

এদিকে গণরুমে থাকা অধিকাংশই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আবাসন সংকটের কারণে তাদের গণরুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ডাকসু ভোট প্রসঙ্গে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ নিজেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দাবি করে ছাত্রলীগ প্যানেলকে ভোট দেবে বলে জানিয়েছে। কেউ আবার এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই রাজি হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর