বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

শিশুদের অতিরিক্ত পড়ার চাপ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশুদের অতিরিক্ত পড়ার চাপ নয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক তুলে দেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। শিশুরা যেন খেলতে খেলতে হাসতে হাসতে সুন্দরভাবে নিজের মতো করে পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থাই করা উচিত। তিনি বলেন, চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহ কমে যাবে। একটা ভীতি সৃষ্টি হবে। তা যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের আমি অনুরোধ করব। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব আকরাম আল হোসেন বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রি-প্রাইমারি এবং প্রাইমারি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে সাত বছর বয়সের আগে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায় না। কিন্তু আমাদের এখানে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। অনেক সময় আমরা দেখি, প্রতিযোগিতা শিশুদের মধ্যে না হলেও মায়েদের মধ্যে বা বাবা-মায়ের একটু বেশি হয়ে যায়। এটাও একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে আমি মনে করি। শিক্ষাটাকে আপন করে নিয়ে সে যেন শিখতে পারে। শিশুরা কেবল ঘরে বসে শিখবে না, দেখেও শিখবে।

অনুষ্ঠানে শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। নিজেদের গড়ে তুলবে, লেখাপড়ায় মনোযোগ দেবে। পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, যার যে গুণ আছে, তা যাতে বিকশিত হয়। তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা যেন বিকশিত হয় সেজন্য আমাদের সবার কাজ করতে হবে। আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। হয়তো এর মধ্য থেকেই কেউ আমার মতোই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা প্রবণতা আছে, অনেকে ধারণা করেন ইংরেজি শিক্ষা না দিলে বোধ হয় শিক্ষাই গ্রহণ করা হলো না। এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়।  

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য ছাপানো প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়, এ প্রক্রিয়াটি বাতিল করতে হবে। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাভিত্তিক প্রাইমারি স্কুলে সব শিশুকে ভর্তি করতে হবে। স্কুলে যাওয়ার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এমন বাংলাদেশ গড়তে, যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। আজকের সোনামণি, ছোট ছোট শিশু-কিশোর তারাই এ দেশের সোনার ছেলেমেয়ে, তারাই ভবিষ্যতে দেশ গড়ে তুলবে। সেই আশাই পোষণ করি।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম আমরা করে দিয়েছি, এটা পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় করে দেব এবং প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই কম্পিউটার যাতে শেখা হয়, সে ব্যবস্থাও আমরা নেব। মাধ্যমিক থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, প্রাথমিক থেকেও আমরা করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছে। তা ছাড়া এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে,? বিশেষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে যেন অন্তত একটা স্কুল থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব ভেবে প্রায় ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি স্কুল দরকার হলে টিফিন তৈরি করে দেবে, না হলে বাচ্চার মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য টিফিন তৈরি করে দেবে। এটা প্রত্যেক মা এবং অভিভাবককেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি চালুর ফলে আমরা দেখেছি অনেক জায়গায়ই এখন ঝরেপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি এ সময় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিজম আক্রান্ত বা প্রতিবন্ধী) শিশুদের শিক্ষার বেলায়ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, সহপাঠী এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে মূল স্রোতে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শিক্ষা জীবনের শুরুতেই একটি সনদপত্র পাওয়ায় তাদের যেমন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তেমনি পরীক্ষাভীতিও দূর হচ্ছে। তিনি বলেন, এগুলো এ জন্য করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকে কোনো ভীতির বিষয় মনে না করে। উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল সারা দেশে র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

সর্বশেষ খবর