বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারও বিরুদ্ধে মামলা ও বহিষ্কার করিনি

ড. জিনাত হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারও বিরুদ্ধে মামলা ও বহিষ্কার করিনি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন রোকেয়া হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বিষয়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করিনি। কাউকে হল থেকে বহিষ্কারও করিনি। এভাবে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। জিনাত হুদা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ও ডাকসু নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে এগুলো করা হচ্ছে। রোকেয়া হলে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এজন্য এখানকার ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘রোকেয়া হলের ব্যালট বক্স চুরির বিষয়টি ছিল পুরোপুরি মিথ্যাচারিতা। চিফ রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্পষ্ট লেখা আছে, রোকেয়া হলে ছয়টি খালি ব্যালট বক্স এবং তিনটি ট্রাঙ্ক পাঠানো হয়েছে। ট্রাঙ্কগুলো ব্যালট পেপার ভর্তি ছিল। এ রকম কালো রঙের ট্রাঙ্কে সব হলেই ব্যালট পাঠানো হয়েছে। নয়টি ব্যালট বক্সের কথা বলে যে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যাচার। এরপর ভোট গ্রহণ ঠিকমতো শুরু করা হয়নি বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা সব ব্যালট বাক্স সব দলের প্রার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে খুলে দেখিয়ে, এরপর সিলগালা করে ভোট গ্রহণ শুরু করেছি। ছাত্রদল নেতা অনীক, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী রাফিয়া, রোকেয়া পরিষদের প্রার্থী মৌসুমী উপস্থিত ছিল। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে। এজন্য আমরা ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু করি। রোকেয়া হলের ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৪০৬। ট্রাঙ্কের ভিতরে এ ব্যালটগুলো রাখা ছিল। ভোট গ্রহণ শুরুর সময় আমরা সেখান থেকে ২ হাজার ব্যালট নিয়ে ভোট শুরু করি। বাকিগুলো ট্রাঙ্কে ভরে ভোট কেন্দ্রের পাশে রোকেয়া হল সংসদ রুম নামে পরিচিত হলের স্ট্রং রুমে রাখা হয়। এ রুমে হলের অতিগুরুত্বপূর্ণ কাগজ, পরীক্ষার প্রশ্ন অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়। সেখানে ব্যালট পেপারগুলো সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়।’ পরবর্তী পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভালোভাবে ভোট হয়েছে। এরপর হঠাৎ করে নুর, রাশেদ, ফারুক অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে রোকেয়া হলে ঢুকে গেল। তারা এসে হলের স্ট্রং রুমের তালা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করল। তখন আমি, হলের হাউস টিউটর ও কর্মকর্তারা বাধা দিলাম। বলা হলো, প্রক্টর এলে তালা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে। এ কথা বলার পর নুর আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল, শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করল। পরে প্রক্টর এলে সবার উপস্থিতিতে ট্রাঙ্ক খোলা হলো। তখন রুমের ভিতরে নুর, লিটন নন্দী, রাব্বানী, শোভন, অনীক অর্থাৎ সব দলের প্রার্থীর উপস্থিতিতে ট্রাঙ্ক খুলে দেখানো হলো। সেখানে দেখানো হলো ব্যালট পেপার নিরাপদে ট্রাঙ্কে রয়েছে। তখন আমি নুরকে বললাম, তুমি তো অনেক কথা বলেছিলে, ব্যালট তো ঠিকই আছে। এখন কী বলবে। নুর এ সময় চুপ করে থাকল। বের হয়ে আসার পর আমি যখন মাইক নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলাম, নুরের সঙ্গে যারা ছিল তারা সবাই মিলে আবার ধাক্কাধাক্কি করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করল। আমাদের লাঞ্ছিত করল। এরপর উম্মে হাবিবা বেনজির এসে আবার স্ট্রং রুমের তালা ভেঙে ট্রাঙ্কগুলোকে বাইরে নিয়ে এলো। বাইরে এনে ট্রাঙ্কগুলোকে ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে সিল মারা ব্যালট আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা একটিও সিল মারা ব্যালট দেখাতে পারেনি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এ ব্যালটের মধ্যে তারা ১০০-২০০ ব্যালট ছিঁড়ে মাঠে ছড়িয়ে ফেলল। কিন্তু বাকি কয়েক হাজার ব্যালট কোথায় গেল? রোকেয়া হলে আর কোনো ফাঁকা ব্যালট ছিল না। তার মানে কেউ বা এসব ব্যালট সুপরিকল্পিতভাবে ছিনতাই করেছে। এ ঘটনাগুলো সেদিন ঘটেছিল।’

সর্বশেষ খবর