বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাওয়ালপুরের নেত্রী বলেন, ইতিহাস ভুট্টোকে ক্ষমা করবে না

শামীম আহমেদ

ভাওয়ালপুরের নেত্রী বলেন, ইতিহাস ভুট্টোকে ক্ষমা করবে না

আগেরদিন সামরিক সরকারের জারি করা ফরমানের বিরুদ্ধে এদিন দেশের মানুষ ফুঁসে ওঠেন। পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের এই দিনে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘যাদের প্রতি সামরিক আইনের সর্বশেষ আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, তারা যেন কোনো প্রকার হুমকির মুখে মাথানত না করেন। আমি যে কোনো আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকার এবং যে কোনো শক্তিকে সম্ভাব্য সব উপায়ে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।’ একাত্তরের এই দিনে করাচিতে এক জনসভায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের দুই অংশে দুজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে প্রস্তাব দেন তার বিরুদ্ধে খোদ পশ্চিম পাকিস্তানেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভাওয়ালপুর ইউনাইটেড ফ্রন্টের নেত্রী বেগম তাহেরা মাসুদ বলেন, ‘ভুট্টো রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত করেছেন। ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না। আমরা ভাওয়ালপুরের ৩২ লাখ মানুষ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের যৌক্তিক দাবি ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছি।’ ভুট্টো করাচি জনসভায় বলেন, ‘যে কোনো ধরনের সাংবিধানিক নিষ্পত্তির পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি মতে যদি জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়; তবে এটি অবশ্যই হতে হবে পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানেও অনুরূপভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে।’ অর্থাৎ পূর্বাংশে আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিমাংশে পিপলস পার্টি সরকার গঠন করবে। বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতি তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখন শেখ মুজিব সমগ্র দেশ শাসনে জনগণের রায় অর্জন করেছেন, তখন কেন তাকে অর্ধেকাংশে ক্ষমতা দেওয়া হবে? আমি আশা করি যত দ্রুত সম্ভব প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগ  নেতার সঙ্গে জীর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আলোচনা শুরু করবেন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে শেখ মুজিবই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশকে টিকিয়ে রাখতে পারেন।’ বঙ্গবন্ধু এদিন নতুন নির্দেশ (৩৫ নং) জারি করেন, যা পরদিন অর্থাৎ ১৫ মার্চ সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। নির্দেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সেক্রেটারিয়েট ও দফতরগুলো আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাই কোর্ট এবং অন্যান্য আদালতে হরতাল নির্দেশানুসারে পালিত হবে। বিভিন্ন সময় নির্দেশের যেসব ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা এ নির্দেশের অংশ বলে পরিগণিত হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ডিসি এবং মহকুমা প্রশাসকরা অফিস বন্ধ রেখে নিজ নিজ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে কাজ করবে।’ এ নির্দেশ জনগণকে আরও সংগ্রামী করে তোলে। বাড়িয়ে দেয় মনোবল। অচল হয়ে যায় দেশ। পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা শিল্প-ব্যবসা চালু রাখার স্বার্থে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেন। তারা বলেন, ‘দেশের অখ তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানের চার দফা মেনে নেওয়া হোক। আওয়ামী লীগ প্রধানের সাম্প্রতিক নির্দেশের ফলে তাদের সমুদয় অর্থ-সম্পদ আটকা পড়েছে এবং অর্থাভাবে অচিরেই তাদের কাপড়ের মিলসহ অন্যান্য কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর