শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

উপকূলে হাতছানি নতুন ভূখণ্ডের

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

উপকূলে হাতছানি নতুন ভূখণ্ডের

যে মুহূর্তে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সিংহভাগ ভূখ- সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক সে মুহূর্তেই এক অভাবনীয় সম্ভাবনা জনমনে সীমাহীন আশা জাগিয়েছে। বলছি নোয়াখালীর উপকূলীয় মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরের কথা। এর আগে নোয়াখালীরই হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে নিঝুম দ্বীপ, স্বর্ণ দ্বীপ ও ভাসানচরসহ অনেক দ্বীপ। এক কথায় আগামী এক দশকে হাতিয়া উপজেলার আয়তন একটি বিশাল আয়তনের জেলার সমান হবে। মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হচ্ছে, বিপরীতে এর চতুষ্পার্শ্বে অন্তত ১০ গুণ ভূমি জেগে উঠছে। নিঝুম দ্বীপ থেকে মুক্তারিয়া ঘাটসহ কয়েকটি ক্রস ড্যাম আর প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হলে কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকার আয়তন দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার বর্গমাইল। প্রতিবছর নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ৭০ হাজার হেক্টর জমি জাগছে। বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেকটি বাংলাদেশের হাতছানি।

গত তিন দশকে জেগে ওঠা চরে তিনটি ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কমপক্ষে আরও আট-দশটি ইউনিয়নের আয়তনের সমপরিমাণ ভূমি জেগেছে। হাতিয়ার হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নের সীমানা পেরিয়ে পূর্ব-দক্ষিণে বিশাল ভূমি এখন স্বর্ণ দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। স্বর্ণ দ্বীপের আয়তন একটি উপজেলার আয়তনের সমান। স্বর্ণ দ্বীপের ১৫ কিলোমিটার অবস্থান মেঘনা পেরিয়ে দক্ষিণে ভাসানচরে। রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ভাসানচরের আয়তন প্রায় আড়াইশ বর্গ কিলোমিটার। ভাসানচরের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে ১০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাঙ্গুরিয়ার চরের অবস্থান। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে গাঙ্গুরিয়ার চরে চাষাবাদ শুরু হবে।

এ ছাড়া হাতিয়ার দক্ষিণে নিঝুম দ্বীপ, পশ্চিমে ঢাল চর, চর মোহাম্মদ আলী, চর ইউনুস, চর আউয়াল, মৌলভীর চর, তমরদ্দির চর, জাগলার চর, উত্তরে নলের চর, কেয়ারিং চর, ইসলাম চর, জাহাইজ্জার চর, নঙ্গলিয়ার চর, সাহেব আলীর চর, দক্ষিণে কালাম চর, রাস্তার চরসহ অন্তত ১৫টি দ্বীপ ১৫-২০ বছর আগে থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠেছে। এ ছাড়া উড়ির চরের পাশেও কয়েকটি চর জাগছে।

হাতিয়া দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে দুই দশক আগে জেগে ওঠা চর নূর ইসলামে এখন চাষাবাদ চলছে। অন্যদিকে বুড়ির চর ইউনিয়নের রহমত বাজারের দেড় কিলোমিটার পূর্বে মেঘনায় গত এক দশকে অন্তত ৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি জেগেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বুড়ির চর ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণে কালির চর পেরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি ইউনিয়নের আয়তনের সমান ভূমিতে জনবসতি গড়ে ওঠার পাশাপাশি এখানে চাষাবাদ ও শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। কালির চরের পূর্ব ও দক্ষিণে সাগরের বুক চিরে আগামী দেড় দশকে আরও চার শতাধিক বর্গ কিলোমিটার ভূমি জেগে ওঠার আশা পোষণ করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। হাতিয়া উপজেলার পশ্চিমে তমরদ্দি ঘাট থেকে পশ্চিমে ভোলার মনপুরা উপজেলা। তমরদ্দি নৌঘাট থেকে মনপুরা উপজেলার দূরত্ব ৮ থেকে ৯ বর্গ মাইল। ৮-১০ বছর দুই পাশের হাতিয়া নদীতে সাতটি চর জেগেছে। এর মধ্যে কলাতলী, তেলিয়ার চর, বদনার চর, ঢাল চর ও মৌলভীর চরে বনায়ন এবং চাষাবাদ চলছে। আগামী এক দশকে এসব চরের আয়তন হবে প্রায় পাঁচশ বর্গ কিলোমিটার। এগুলোর মধ্যে নিঝুম দ্বীপে ৭০ হাজার লোকের বসবাস। এ ছাড়া ঢাল চর, নলের চর, কেয়ারিং চর, মৌলভির চরসহ কয়েকটি দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছে। একইভাবে এসব দ্বীপে বন বিভাগ আবাদ করে সবুজ বনায়ন করেছে। দস্যুদের ভয়ে ও বাকিগুলোতে এখনো বসবাস শুরু হয়নি। এখনো অন্তত ৩০-৪০টি ডুবোচর রয়েছে, যেগুলো পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জেগে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। ভাটায় দেখা গেলেও জোয়ারের পানিতে এখনো ডুবে যায় এসব ডুবোচর।

নিঝুম দ্বীপে প্রায় ৪৫ হাজার একর সংরক্ষিত বন এলাকা। এরই মধ্যে সাগরের বুকজুড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গ মাইল আয়তনের ভূখ- গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এ বছর যুক্ত হবে আরও প্রায় ২ হাজার ২০০ মাইল ভূমি। নিঝুম দ্বীপ থেকে মুক্তারিয়া ঘাটসহ কয়েকটি ক্রস ড্যামের উদ্যোগ নেওয়া হলে কয়েক বছরের মধ্যে ওই এলাকার আয়তন দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার বর্গ মাইল। সব মিলিয়ে বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেকটি বাংলাদেশের হাতছানি।

নিঝুম দ্বীপের কাছাকাছি এলাকায়ও কয়েকশ বর্গ মাইল নতুন চর জেগে উঠেছে। রয়েছে ডুবোচর। ভাটার সময় নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণে ৪০-৫০ মাইল বড় বড় চরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। যে চরগুলো জেগে উঠেছে সেখানে এখন বসবাস উপযোগী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইডিপির এক জরিপ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত শুধু নোয়াখালী উপকূলেই সাড়ে ৯ বর্গ মাইল ভূমি জেগে ওঠে এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও দুই-তিন গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ চরগুলো পরিকল্পিতভাবে স্থায়িত্ব দিতে সরকারি উদ্যেগ তেমন দেখা যায় না। বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক গুরুত্ব পাচ্ছে না। সমুদ্রবক্ষে সম্ভাবনার বিশাল আশীর্বাদ এসব ভূখন্ডের পরিকল্পিত ব্যবহার, বনায়ন ও সংরক্ষণে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া হয়নি এখনো। নিঝুম দ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ‘ডুবোচর’ হিসেবে পরিচিত চরগুলোয় জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি ‘নতুন চর’ এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখ- ভরা জোয়ারেও ডুবছে না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শিগগিরই বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন ভূখ- ২০-২৫টি দ্বীপ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নঙ্গলিয়া এলাকায় নতুন চর জেগে মেঘনার মোহনা জুড়ে বড় বড় আয়তনের নতুন ভূখ- দেখা দিয়েছে। সেসব চরে উড়িঘাস গজাতেও শুরু করেছে। নিঝুম দ্বীপ থেকে মুক্তারিয়ার ঘাট এবং উড়ির চর থেকে জাহাইজ্জার চর পর্যন্ত ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে এ মুহূর্তে অনেক ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। ক্রসবাঁধের মাধ্যমে হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপ-ধমার চরকে মূল স্থলভূমির সঙ্গে সংযুক্ত করার খুবই চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে অচিরেই অবিচ্ছিন্ন ভূখ- মিলবে।

সাগরবুকে ভূমি উদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব প্রযুক্তির প্রয়োজন, সেগুলো বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে উদ্ভাবনও করেছেন। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতন্ত ২০ থেকে ২৫ বর্গ মাইল নতুন চর জেগে ওঠে। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে জেগে ওঠা চরভূমির পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা মোহনা সমীক্ষায়ও এ তথ্যের সত্যতা উঠে আসে। পাউবো সমীক্ষায় বলা হয়, নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় ভূমি প্রাপ্তির হারই বেশি।

সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর উপকূলে হাতিয়ায় সবচেয়ে বেশি ভূখ- জেগে উঠছে। ইতিমধ্যে ক্রসবাঁধ পদ্ধতিতেও বঙ্গোপসাগর থেকে লক্ষাধিক হেক্টর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার বর্গ মাইল আয়তনের নতুন ভূখ- পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি ক্রসবাঁধের মাধ্যমে নোয়াখালীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও সন্দ্বীপের সংযুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়েও এখন গবেষণা চলছে। এটি সম্ভব হলে সূচিত হবে যুগান্তকারী অধ্যায়।

অন্যদিকে নিঝুম দ্বীপে ২৫ হাজার হরিণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। এক বছর আগে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দস্যু ও জনপ্রতিনিধিরা ভূমিহীনদের নামে বন উজাড় করলেও এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে বন বিভাগের উদ্যোগের অভাবে ও খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় ২৫ হাজার হরিণের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। সেখানে হরিণের আবাসন, খাদ্য সংকট, অকারণে শিকার, বন্যা, কুকুরের আক্রমণ ও পানীয় জলের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুই বছর আগে নিঝুম দ্বীপে র্বিস্তীর্ণ বনে, ফসলের মাঠে, রাস্তাঘাটে ও লোকালয়ে দেখা যেত মায়াবী হরিণের পাল। লবণাক্ত পানির কারণে এরা রোগাক্রান্ত হয়। অথচ সঠিক তদারকি হলে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার হরিণ রপ্তানি করা সম্ভব। প্রতিটি হরিণের মূল্য ২৫ হাজার টাকা ধরা হলে নিঝুম দ্বীপ থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা আয় করা যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বনের আশপাশের খালি জমিতে ভূমিহীনদের বসবাস আর বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয় দস্যু ও জনপ্রতিনিধিরা অবাধে গাছ কেটে পাচার করায় হরিণের অবাধ বিচরণে সমস্যা হচ্ছে। এতে বনের আয়তন কমে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান মায়াবী চিত্রাহরিণ। হরিণ রপ্তানির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে হরিণের খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। লবণাক্ত পানির কারণে দেখা দিয়েছে রোগ-ব্যাধি। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জালোচ্ছ্বাসের কারণে প্রতিবছর অনেক হরিণ বঙ্গোপসাগর ও নিঝুম দ্বীপের পার্শ্ববর্তী কালাম চর, দুবাই চরসহ বিভিন্ন দ্বীপে ভেসে যায়। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্বীপের ২৫ হাজার হরিণের জন্য একটিমাত্র মিঠাপানির পুকুরের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পানি না থাকায় হরিণগুলো প্রায়ই চলে আসে লোকালয়ে। এ ছাড়া বনে পর্যটকদের অবাধ বিচরণ, খাদ্যের অভাব, রোগাক্রান্ত হওয়া, বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত, পাগলা কুকুরের আক্রমণ ও প্রভাবশালীদের শিকারের কারণে হরিণগুলোর বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মুখে বিশাল বালুচর হরিণের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইদানীং প্রভাবশালীরা ওই খালি জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হলে আর হরিণ থাকবে না বলে দ্বীপবাসী জানান। এ ছাড়া এসব হরিণের চিকিৎসার জন্য বন বিভাগের নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নেই পশু হাসপাতাল।

দুর্যোগের মুহূর্তে হরিণের আশ্রয় নেওয়ার মতো দ্বীপে কোনো মাটির কেল্লা নেই। হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্গোপসাগরের উপকণ্ঠে প্রায় ২ হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটার ভূমির ওপর বেড়ে ওঠা নিঝুম দ্বীপে ১৯৭৩ সাল জনবসতি শুরু হয়। দ্বীপটি কেওড়া, বাইন ও কেরপা গাছ দ্বারা বেষ্টিত। এখানে হরিণের বিচরণ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে, তৎকালীন সরকারের ছেড়ে দেওয়া চার জোড়া হরিণের মাধ্যমে। বর্তমানে বসবাস করছে প্রায় ২৫ হাজার হরিণ। বছরের দুবার করে মা-হরিণগুলো চারটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। মা-হরিণের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যন মেহেরাজ উদ্দিন এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একশ্রেণির অসাধু লোকজন বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভূমিহীন সেজে জমি দখল করার নামে বন উজাড় করেছে। এ জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ৭০ হাজার হেক্টর জমি জাগছে। এর মধ্যে স্বর্ণ দ্বীপের ৮৭ হাজার একর জমি সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এর কিছু পানির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে ভাসানচরে রহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য নৌবাহিনীর মাধ্যমে অবকাঠানো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ (সবুজ বেষ্টনী) বনায়নের কাজ শুরু করা হবে। দুটির মধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে, যেসব স্থান জোয়ারে ডুবে যায় আর ভাটায় জেগে ওঠে। এসব ভূমি নতুন বনায়ন করার উপযোগী। নিঝুম দ্বীপে বন্দোবস্ত দেওয়ায় কিছু গাছ কাটা পড়ে। এতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ফলে বন্দোবস্ত স্থগিত আছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর ৫০ হাজার হেক্টর নতুন ভূমি জাগছে। তবে এর মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। এর পরও মূল ভূখন্ডের সঙ্গে ২০ হাজার হেক্টর যোগ হচ্ছে। এগুলোতে বনায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি নতুন চরগুলো বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আর অবৈধ দখলে থাকা খাসজমিগুলো উদ্ধার করে এগুলোয় ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

সর্বশেষ খবর