শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

যে কারণে রক্ষা পেলেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা

মেজবাহ্-উল-হক

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই হ্যাগলি ওভাল স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী আল নুর মসজিদে সতীর্থদের নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে যান অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নামাজ শুরু হয় ১টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে ১০ মিনিট দেরি হওয়ায় বাংলাদেশ দলকে বহনকারী বাস মসজিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ১টা ৪০ মিনিটে। মাঝের এই ১০ মিনিটেই ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা। আল নুর মসজিদে সিজদারত মুসল্লিদের ওপর এক বন্দুকধারী গুলি ছোড়ে। সংবাদ সম্মেলনে ১০ মিনিট বিলম্ব হওয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে যান তামিম, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, মিরাজরা। ক্রিকেটাররা নিরাপদে থাকলেও বাংলাদেশের তিনজনসহ মোট ৪৯ জন নিহত হন। আল নুর মসজিদের সামনে ক্রিকেটাররা যখন দ্রুত বাস থেকে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই রক্তাক্ত এক মহিলা বাসের সামনে এসে পড়ে যান। তারপর পাশ থেকে এসে এক মহিলা জানান, মসজিদের ভিতরে গোলাগুলি হচ্ছে। তারপর স্বচক্ষেই টাইগাররা দেখতে পান বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত মানুষ মসজিদ থেকে বের হয়ে আসছেন। চোখের সামনে এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। প্রাণভয়ে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করেন। অবশ্য তারপর দ্রুত বাস থেকে নেমে পার্কের ভিতর দিয়ে দৌড়ে ক্রাইস্টচার্চ হ্যাগলি ওভাল স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে পৌঁছে যান ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে নিরাপদে টিম হোটেলে পৌঁছে যান তামিম-মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা। ঘটনার সময় দলের সঙ্গে বাসে ছিলেন টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট। তিনি বলেন, ‘বাসে ছিলাম আমরা ১৭ জনের মতো। কেবল দুজন (নাঈম হাসান ও লিটন দাস) হোটেলে ছিল। ঘটনার সময় আমরা মসজিদ থেকে ৫০ গজ দূরে ছিলাম। আমরা খুবই ভাগ্যবান ছিলাম। আর যদি ৩-৪ মিনিট আগে চলে আসতাম তাহলে হয়তো বড় দুর্ঘটনাই ঘটে যেত।’ পাইলট বলেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন ম্যুভি দেখছি। রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষ বের হয়ে আসছে (মসজিদ থেকে)। আমরা প্রায় ৮-১০ মিনিট মাথা নিচু করে বাসের মধ্যে বসে ছিলাম। যাতে কোনো কারণে যদি বাসকে লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়, আমাদের যেন না লাগে।’ ভীতসন্ত্রস্ত পাইলট বলেন, ‘পরে যখন বুঝলাম অস্ত্রধারীরা বাসে এসে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করলে বাসের মধ্যে একসঙ্গে অনেককে পাওয়া যাবে, ঘটনার তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে; তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম পেছন দিক দিয়ে যে গেট আছে, সবাই বের হয়ে যাব।’ টিম ম্যানেজার ও ক্রিকেটারদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। পাইলট বলেন, ‘আমার মনে হয়, খেলোয়াড়রা তখন সেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাস থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। পরে যখন আমরা ভিডিও দেখলাম, দেখতে পেলাম যে বাইরে এসেও গুলি করছিল।’ তামিম ইকবাল টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘পুরো দল গোলাগুলির হাত থেকে বেঁচে গেল। খুবই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনা থেকে আল্লাহ আজ আমাদের বাঁচিয়ে দিলেন। আমরা অনেক বেশি ভাগ্যবান। আর কখনো এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে চাই না।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিরাপদে হোটেলে পৌঁছে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ অনেক ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। বিসিবি জানিয়েছে, আজ রাতেই দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরটি আগে থেকেই ছিল আতঙ্কের নগরী। এর আগে ২০১০ সালে ৪ সেপ্টেম্বর ও ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পরপর দুই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮৫ জন। ২০১৭ সালের দাবানলে হাজারো হেক্টর (২০৭৬ হেক্টর) পুড়ে যায়। ভূমিকম্প ও দাবানলের শহরে যুক্ত হলো এক সন্ত্রাসী হামলা।

সর্বশেষ খবর