শিরোনাম
রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক

১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ। দিনটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২তম জন্মদিন। এদিন সকাল থেকেই তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবনে নেতা-কর্মী, বিশিষ্টজন ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা ভিড় করতে থাকেন। কেউ আসেন শুভেচ্ছা জানাতে, কেউ আসেন সর্বশেষ পরিস্থিতি ও নির্দেশনা জানতে। কিন্তু জন্মদিনের আমোদ ছিল না বঙ্গবন্ধুর মনে। শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে নিষ্ফল বৈঠক আর দেশের মানুষের চরম অনিরাপত্তা ভাবিয়ে তুলেছিল বাঙালির অবিসংবাদিত নেতাকে। জন্মদিনে চাওয়া কী?- এক বিদেশি সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এককথায় জবাব দেন, ‘জনগণের মুক্তি’। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। তাদের নিরাপত্তা নেই। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু ঘটতে পারে। আমি তো জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী?’ দিনটি ছিল অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে বাংলার মানুষ। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও ঢাকা নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সভা-সমাবেশ ও মিছিল করে। মানুষের স্রোত এসে মিলিত হতে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালনের জন্য বাংলাদেশের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ প্রত্যেকের প্রতি আহ্বান জানায়। এদিন দ্বিতীয় দিনের মতো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক হয়।

 আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুই হাজির হন প্রেসিডেন্ট ভবনে। তবে এক ঘণ্টাও স্থায়ী হয়নি সেই বৈঠক। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু গম্ভীর মুখে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। সবার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। আরও আলোচনা হতে পারে। আজও হতে পারে, আগামীকালও হতে পারে।’ এরপর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। সাংবাদিকরাও হাজির হন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা চলছে। আমি আমার দাবির কথা তুলে ধরেছি। আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না নিরর্থক হচ্ছে তা আমি জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, আলোচনা চলছে।’ এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রেসিডেন্ট আপনার সামনে কোনো ফর্মুলা পেশ করেছেন কি? তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’ তখন এক সাংবাদিক অনুযোগের সুরে বলেন, কিছুই তো বললেন না। বঙ্গবন্ধু পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘সত্যিই কি কিছুই বলি নাই?’ এরপর সব সাংবাদিককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি কি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি? আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

পরে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নে দেশের মানুষের অবস্থা ও ৪ দফা দাবিতে নিজের দৃঢ় অবস্থান ব্যাখ্যা করেন বঙ্গবন্ধু। তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের সব কিছু আছে। অবারিত মাঠ, উদার আকাশ, উর্বর পলির নদী, সোনালী ফসল পাট, ইক্ষু, তামাক, চা, মিঠা পানির মাছ, সুপেয় জলাধার, বিরাট কর্মক্ষম জনশক্তি- সব আছে আমাদের। আমরা চাই শুধু ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান- আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই।’

এদিন ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালী খানও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় সোয়া ঘণ্টা বৈঠকে ন্যাপ নেতাও শেখ মুজিবের ৪ দফা মেনে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে তার এবং দলের মত জানান।

সর্বশেষ খবর