মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। এ দেশে জনগণের অধিকার সমুন্নত থাকবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে দেশবাসীকে আহ্বান করব- আর যেন স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এটাই হোক প্রতিজ্ঞা।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা মুজিববর্ষ পালন করব, এজন্য কমিটি করে দিয়েছি।  আমি চাই সারা দেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, ইউনিয়ন পর্যায়ে মুজিববর্ষ পালন হোক। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।’

বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠত না : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকত না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাকশাল ছিল সর্বোত্তম পন্থা। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা (বাকশাল) করে গিয়েছিলেন সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব (নির্বাচনী অস্বচ্ছতা) প্রশ্ন আর উঠত না।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’ বাকশালের স্বচ্ছতা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে দুটি নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনের একটি হয়েছিল কিশোরগঞ্জে, সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ ভোট দিয়েছিল একজন স্কুলমাস্টারকে। আর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় পটুয়াখালীতে। এ পদ্ধতি চালু নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি এ পদ্ধতি করলেন কেন? তিনি আমাকে বলেছিলেন, “আমাদের দেশে একটি বিপ্লব হয়েছে। এখানে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে; একটা বিপ্লবের পর কিছু মানুষের হাতে অর্থ চলে আসে। আমি চেয়েছি নির্বাচন যেন অর্থ এবং লাঠি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। জনগণের কাছে যেন ভোটের অধিকারটা থাকে, প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকারটা থাকে। তা নিশ্চিত করবার জন্যই আমি এ পদ্ধতিটা শুরু করেছি”।’ বাকশাল বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ছিল দাবি করে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য যে কতটা উপযোগী ছিল একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ তা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারবে।’

ভোটব্যবস্থা ধ্বংস করেছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করলেন। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া, ঋণখেলাপি, ঘুষ-দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যা যা সৃষ্টি হয়েছিল, সবই সেখান থেকে এসেছিল। এ অবস্থা চলে এসেছিল ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ভাঁওতাবাজি করেছেন। বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ায় গত নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি বলেন, ‘একটা দল নির্বাচিত হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা দেখাতে পারছে না। দুর্নীতি-হত্যা-খুনের মধ্য দিয়ে তাদের নেতারা জেলে অথবা বিদেশে পলাতক, ঠিক সেই অবস্থায় নির্বাচন। ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। জামায়াত একটা সিটও পায়নি। বিএনপি নামকাওয়াস্তে সিট পেয়েছে। কেননা ৩০০ সিটে যখন ৭০০-এর কাছাকাছি নমিনেশন দেয় তখন মানুষের ভোট পাবে কীভাবে?’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ের সেই ছোট্ট শিশুটির নাম এখন বিশ্বেজুড়ে সমাদৃত। তিনি একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যে বাংলাদেশের মানুষ এক বেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারত না। উল্টো নির্যাতিত হতো। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগও ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার কথা বঙ্গবন্ধু কখনো প্রকাশ্যে বলেননি। তিনি শোষণ আর বঞ্চনার কথা মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন, মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা তৈরি করেছেন; যার ফলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, গোয়েন্দা নথি- এগুলো একে একে প্রকাশ করতে শুরু করেছি। এরই মধ্যে দুই খে  গোয়েন্দা নথি বের হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় খে  রয়েছে ১৯৫২ সালে জাতির পিতা যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোর কথা। তিনি জেলখানায় থেকেই কীভাবে যোগাযোগ করেছেন, কীভাবে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, এমন সব তথ্য পাওয়া যাবে এই খে । খুব শিগগিরই ১৯৫৩ সালের যে খ টা সেটা বের হবে সেখানে আরও তথ্য পাওয়া যাবে তিনি কীভাবে আন্দোলন করেছেন।’

‘বাংলা ভাষার বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন : ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার প্রচারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানবিষয়ক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলা ভাষার বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান ও জার্নি পাবলিকেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার বজলুল হক উপস্থিত ছিলেন। জার্নি পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার প্রচারে বঙ্গবন্ধুর অবদান সচিত্র তথ্যসহ তুলে ধরা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর