বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

চার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী খুন

রাঙামাটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সুনামগঞ্জে দলীয় নেতা, নরসিংদীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুজন

প্রতিদিন ডেস্ক

নরসিংদী, সুনামগঞ্জ ও রাঙামাটিতে আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে চার আওয়ামী লীগ নেতা খুন হয়েছেন। গতকাল তিন জেলায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশকান্তি তংঞ্চঙ্গ্যা (৫৭), নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জার চর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ইকবাল হোসেন (৩০) ও তার চাচাতো ভাই আমান উল্লাহ (২৭) এবং সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।

রাঙামাটি : বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশকান্তি তংঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল বিলাইছড়ির ফারুয়া এলাকার আলিক্ষিয়ংয়ে এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের কাজ শেষ করে নদীপথে সুরেশকান্তি তংঞ্চঙ্গ্যা স্পিডবোটে করে বাড়ি ফিরছিলেন। আলিক্ষিয়ং পৌঁছালে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় তার স্ত্রী ও সন্তানও স্পিডবোটে ছিলেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইকবাল জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশকান্তি তংঞ্চঙ্গ্যার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার জন্য রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর শান্তি চুক্তিকারী সন্তু লারমার সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করেছেন। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এ হত্যাকাে র প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

নরসিংদী : রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল মির্জার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত দুজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী। গুলিবিদ্ধ সাজ্জাদ হোসেন (২৮), আজিজুল ইসলাম (২৬) ও রহমত উল্লাহকে (১৮) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মির্জার চর ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ সভাপতি জাফর ইকবাল মানিকের সঙ্গে একই গ্রামের উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ফারুকুল ইসলামের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে ফারুকুল ইসলাম নির্র্বাচন করেন। তবে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাফর ইকবাল মানিক। এসব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একাধিকবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ হামলা ও সংঘর্ষের কারণে চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। সম্প্রতি চেয়ারম্যান সমর্থকরা গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ তাদের ঠেকাতে পাহারা বসায়। গতকাল ভোরে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা গ্রামে প্রবেশ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ পাঁচজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুননাহার বলেন, পাঁচজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাদের বুকে গুলি লেগেছিল। রায়পুরা থানার ওসি (অপারেশন) মোজাফফর হোসেন জানান, হতাহতরা সবাই চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিকের সমর্থক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় উপজেলার মঙ্গলকাটা এলাকার ধলাইপাড় প্রাইমারি স্কুলের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জয়নাল আবেদীন মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিনের ছেলে। হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে জয়নালের তিন বন্ধু ও তার দোকান কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন সেলিম মিয়া (২৬), সাগর মিয়া (১৭), শাহিন শাহ (৪০) ও দোকানের কর্মচারী রবি মিয়া (২৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে জয়নাল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। ভোরে স্বজনরা লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। জয়নালের বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। জয়নালের ছোট ভাই মোহাম্মদ হানিফ অভিযোগ করেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ বলেন, হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। তবে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর