রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব, নুরের ভিন্নমত

ডাকসু নেতাদের দায়িত্বগ্রহণ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে আবারও আলোর মুখ দেখল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ১৮টি হল সংসদ। গতকাল ডাকসু ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভা শেষে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জয়ী নেতারা। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টিও প্রাথমিকভাবে গৃহীত হয়েছে। ডাকসুর আগামী কার্যকরী সংসদের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডাকসুর দায়িত্ব অর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ প্রদানের প্রস্তাব দেন ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরীমা তানজিনা অর্ণি। প্রস্তাবটি সভায় ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হয়। প্রস্তাবের বিষয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিন দশক পর নির্বাচন আয়োজনের পেছনে তিনি সহায়তা করেছেন, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তার আশ্বাসের কারণে আমরা নিজেদের শক্তিশালী অনুভব করেছি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবনা এসেছে। প্রস্তাবনাটি ধন্যবাদের সহিত গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে এই মহতি কার্যক্রম গ্রহণ করব।

বিষয়টি সম্পর্কে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাবটি সংসদের অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ডাকসুর বর্তমান সংসদকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে এই সংসদ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন ভিপি নুুরুল হক নুর। তিনি বলেন, প্রস্তাবনাটি নিয়ে আমরা কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী একজন সম্মানিত ব্যক্তি, দেশের নির্বাহী প্রধান। ডাকসুর সদস্য পদ দেওয়া তার জন্য বড় কিছু না। এই নির্বাচন সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একদিকে আমরা যখন দায়িত্ব নিচ্ছি, তখন আমার ভাই-বোনেরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আটজন নিরপেক্ষ শিক্ষক পর্যবেক্ষণ শেষে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে পুনরায় নির্বাচন চেয়েছেন। এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আসা ডাকসুতে আমরা চাই না, প্রধানমন্ত্রীকে সদস্য পদ দেওয়া হোক। তাই আমিসহ কয়েকজন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছি। এ সময় তার পাশে থাকা জিএস গোলাম রাব্বানী প্রতিবাদ করে বলেন, শুধু তিনি (নুর) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। ডাকসু একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এখানে অধিকাংশের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে সদস্য পদ দেওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ সদস্য পক্ষে মত দিয়েছে। নুরের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গতকাল সকাল ১১টায় দায়িত্ব অর্পণ অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ডাকসু ভবনে। সভা শুরুর আগেই অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগ সমর্থিত নির্বাচিত অন্য সম্পাদকরা। এর কিছুক্ষণ পর সভায় আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। একই সঙ্গে সভায় আসেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। পরে জিএস গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় শুরু হয় ডাকসুর কার্যকরী পরিষদের সভা। সভার শুরুতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বই এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মানুষের অধিকার আদায়ের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সভায় ডাকসুর বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি ধন্যবাদের সহিত গ্রহীত হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়ব্যাপাী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি ডাকসুর সদ্য নির্বাচিত নেতাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজ থেকে তাদের কার্যকাল শুরু হলো। তাই এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কাজ করা, বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে ডাকসুর যে ভূমিকা তা তারা সমুন্নত রাখবে। দায়িত্বশীলভাবে তারা নিজ নিজ পদের সম্মান রাখবে। এরপর বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আমরা এই সভায় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। উপাচার্য ভিপি, জিএস এবং এজিএসকে প্রতিনিধি নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাদের সব প্যানেলের সাধারণ দাবি হল থেকে গণরুম-গেস্টরুম, রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট দেওয়া বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসএম হলে অছাত্র, বহিরাগতদের উচ্ছেদের নোটিসের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ইস্যুর মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচলের জন্য বাই-সাইকেল ও রিকশার জন্য আলাদা লেন করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচলের জন্য আড়াইশ থেকে তিনশ রিকশাকে রেজিস্ট্রেশন করা হবে। রিকশা ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। দায়িত্ব অর্পণ অনুষ্ঠানের সময়ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করতে দেখা গেছে ছাত্রদল, ছাত্রফেডারেশন এবং জাসদ ছাত্রলীগকে। সভা শুরুর কিছুক্ষণ পর ডাকসু ভবনের বাহিরে পুনর্নির্বাচন, সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে ছাত্রপ্রতিনিধির দাবিতে মানববন্ধন করে ছাত্র ফেডারেশন। একই সময় পুনর্নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জাসদ ছাত্রলীগ। এরপর ভোট জালিয়াতির অভিযোগে ডাকসুর নির্বাচন বাতিলের দাবিতে মুখে কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

সর্বশেষ খবর