সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে বাস চাপায় হত্যার প্রতিবাদে গতকাল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল স্তব্ধতা। দাফতরিক কাজেও ছিল স্থবিরতা। সবমিলিয়ে এখনো শোকের আবহ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এদিকে, ওয়াসিম নিহতের ঘটনায় গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদে গত রবিবার সিলেট নগরীর চৌহাট্টা সড়ক অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেন সিকৃবি শিক্ষার্থীরা। ঘাতক বাস চালক ও হেলারের ফাঁসি, উদার পরিবহনের রুট পারমিট ও লাইসেন্স বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে তারা তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করে। ঘোষিত কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল সিকৃবির সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরাও। এ ছাড়া গতকাল পূর্ব নির্ধারিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভাও স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিকৃবির বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের ছাত্র ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছি। আমরা চাই আমাদের ছাত্র ওয়াসিম হত্যার বিচার হোক।’ এদিকে, বাস থেকে ফেলে দিয়ে ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে হত্যার ঘটনায় গতকাল মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কু বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বাসচালক জুয়েল আহমদ (৩০), হেলপার মাসুক মিয়া (৩১) ও সুপারভাইজার শেফুল মিয়াকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ চালক জুয়েল ও হেলপার মাসুককে আটক করলেও সুপারভাইজার শেফুল এখনো পলাতক রয়েছে। মামলায় ওইদিন ওয়াসিমের সঙ্গে থাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থীকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার থানার ওসি সোহেল আহমদ। প্রসঙ্গত, গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সিকৃবি শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে উদার পরিবহনের একটি বাস থেকে ঢাকা-সিলেট রোডের শেরপুর এলাকায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় হেলপার।
এ সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় ওয়াসিম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই পুলিশ সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে বাস চালক জুয়েল আহমদকে ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় গ্রাম থেকে হেলপার মাসুক মিয়াকে আটক করে।
