মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

থাকছে না পাঁচ ব্যাংক

আপাতত নতুন আর কোনো ব্যাংক একীভূত নয়

শাহেদ আলী ইরশাদ

একীভূতকরণের ফলে থাকছে না সরকারি-বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংক। আপাতত নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূতের উদ্যোগ না নিয়ে প্রস্তাবিত এসব ব্যাংক নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, একীভূত করার আগে ব্যাংকগুলোর জন্য আড়াই বছরের একটি রোডম্যাপ ঠিক করে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমারের মতো বেসরকারি খাতের শরিয়াহ ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আরেক বেসরকারি পদ্মা ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও উভয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে চুক্তিও সই হয়েছে।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার চুক্তির পরপরই আরও চারটি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার খবর এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-বিডিবিএল। বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে একীভূত হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। আর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে আরেক বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক একভূতীকরণ নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে একীভূত করা হবে না। পরবর্তীতে অন্য কোনো ব্যাংক একীভূত করা হবে কি না জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার খবরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে যে কোনো সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়েছেন। দাবিতে তারা বলেছেন, সরকারি একটি ব্যাংক বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার খবরে আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ব্যাংকের সব কর্মীর ভবিষ্যতের অনিয়শ্চতা দূর করতে মূল ধারার অপর একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করা হলে সব বিবেচনায় তা হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও প্রভূত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরেই তাগিদ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়টি তাদের সর্বশেষ নির্বাচনি ইশতেহারে রেখেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ব্যাংকের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি পুরো ব্যাংক খাতকে করে ফেলেছে কলুষিত। সৃষ্টি হয়েছে উচ্চ খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি। অনাস্থা, তারল্য সংকট বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে দুর্বল ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে সবলের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে একীভূত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে অনুসরণ করা উচিত। এ জন্য নীতি সহায়তা দিতে হবে। একীভূত করার ফলে যেন সবল ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল না হয় সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমানতকারীদের টাকায় ব্যাংক চলে, তাদের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা আছে। অনেক বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা রয়েছে। সবাই আমাদের কাছে একীভূত করার বিষয়ে জানতে চায়। আমরা বলেছি কোনো সমস্যা হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর