বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি মেয়ের দুঃসাহসে হতবাক মুম্বাই পুলিশ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসা বাংলাদেশি এক মেয়ের (বয়স ১৭) দুঃসাহস দেখে হতবাক হয়ে গেছে মুম্বাই নগরীর পুলিশ। নারী পাচার চক্রের সদস্য রাজ (প্রকৃত নাম নয়) মেয়েটি, মেয়েটির মা ও চাচিকে মুম্বাইতে আনার পরই তার গর্ভধারিণী মা এবং চাচিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানকার পতিতালয়ে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি খদ্দেরের চাহিদামতো ওই নাবালিকা মেয়েকেও বিভিন্ন হোটেলে দেহ ব্যবসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এ ঘটনা কোনোভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না ওই নাবালিকা। ঘটনার প্রতিবাদও করেছিল সে। আর তাতেই ফোঁস করে উঠেছিল রাজ। সে হুমকি দেয় ওই মেয়ের দেহ ব্যবসার গোপন ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার। এমনকি তার মা ও চাচিকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। আর এরপরই নিজেকে এবং মা ও চাচিকে পাচারকারী চক্রের হাত থেকে বাঁচাতে রাজের চার বছরের পুত্র সন্তানকে অপহরণ করে ১৭ বছর বয়সী ওই নাবালিকা। এদিকে ছেলে অপহৃত হওয়ার পরই মুম্বাইয়ের মানপাডা থানায় অভিযোগ করে ওই ব্যক্তি। তদন্তে নামে পুলিশ, আটক করা হয় ওই বাংলাদেশি নাবালিকাকে। আর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই নারী পাচার চক্রের ঘটনা সামনে এলে পুলিশ কর্মীরা হতবাক। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত মুম্বাইয়ের ওই ব্যক্তিকেও। বাংলাদেশের বাগেরহাটের বাসিন্দা ওই মেয়েটি মায়ের সঙ্গেই স্থানীয় কৃষি জমিতে চাষবাসের কাজ করত। তিন মাস আগে সেখানে স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। ওই নারীই তাদের জানায় তার দেবর রাজ মুম্বাইয়ের কোনি এলাকায় বাস করে। সেখানকার কিছু পোশাক কারখানায় কাজের জন্য লোক নেওয়া হবে। কেউ যদি কাজে আগ্রহী হয় তাহলে তারা মুম্বাইতে যেতে পারে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার কয়েকদিন পরই ওই নাবালিকা, তার মা এবং চাচিকে অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে আসা হয়। পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তারা ট্রেনে চেপে মুম্বাইয়ের কল্যাণে গিয়ে পৌঁছায়। তাদের কোনি এলাকার বাসায় এনে তোলে রাজ। এরপরই বাংলাদেশি নাবালিকার মা এবং চাচিকে দেহ ব্যবসার কাজে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয় রাজ। অন্যদিকে ওই নাবালিকাকে কখনো সম্ভাজি নগর বা অন্য জেলায় খদ্দেরদের চাহিদামতো বিভিন্ন হোটেলে দুই-তিন দিনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো। পাশাপাশি তার ওপরে শারীরিক অত্যাচার ও ধর্ষণ করা হতো। একসময় নিজের মা এবং চাচিকে দেখার জন্য রাজের কাছে কাকুতিমিনতি করে ওই নাবালিকা। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। আর এরপরই চরম সিদ্ধান্ত নেয় ওই নাবালিকা। শুক্রবার ভোর ৪টা নাগাদ, রাজের পরিবার যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন তার চার বছরের ছোট্ট ছেলে এবং পরিবারের সব সদস্যের মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ওই মেয়ে। এরপর সে মোবাইল ফোনে গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারাই পরামর্শ দেয় যে মুম্বাইয়ের ভিবান্ডি এলাকার এক ব্যক্তির কাছে যেতে। এরপর রিকশা নিয়ে ভিবান্ডিতে পৌঁছায় ওই নাবালিকা। এদিকে স্থানীয় মানপাডা থানায় শিশু অপহরণের অভিযোগ করে ২৭ বছর বয়সী রাজ। অভিযোগ পেয়ে তখন হন্যে হয়ে ওই অপহরণকারীকে খুঁজে চলেছে পুলিশ। অবশেষে ভিবান্ডি বাসস্ট্যান্ডে অভিযুক্ত অপহরণকারী এবং চার বছরের ওই শিশু সন্তানের হদিস পায় গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু মেয়েটি হিন্দি বলতে না পারা ও বুঝতে না পারার কারণে প্রথমদিকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। পরে এক দোভাষীর সহায়তা নিয়ে আসল ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়। মেয়েটি জানায়, মা ও চাচিকে বাঁচাতে চার বছরের ওই ছোট্ট শিশু সন্তানকে অপহরণ করতে সে বাধ্য হয়েছিল। পুলিশের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকারও করেছে সে। পরবর্তী তদন্তের স্বার্থে ওই বাংলাদেশি মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয় মানপাডা থানা পুলিশের কাছে। সে এখন রয়েছে জুভেনাইল হোমে। রাজের বিরুদ্ধে মানব পাচার এবং ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্সেস’ আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

সর্বশেষ খবর