বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইরানে পাল্টা হামলার শঙ্কা

ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন আহত ১৮

প্রতিদিন ডেস্ক

ইরানে পাল্টা হামলার শঙ্কা

বার্ষিক সেনা দিবসে গতকাল তেহরানে মিসাইলসহ অস্ত্র মহড়া -এএফপি

মার্কিন মিত্র ইসরায়েলের ওপর ইরান থেকে ‘সীমিত মাত্রার’ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার তিন দিন পেরোলেও পাল্টা আঘাত হানেনি তেলআবিব। তবে কীভাবে পাল্টা হামলা চালানো হবে তা নিয়ে তারা নানা কৌশল গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছে। এদিকে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে সরাসরি অংশ না নিয়ে প্রথম পর্যায়ে ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পন্থা অবলম্বন করেছে। যে কোনো সময় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, বিবিসি। একটি খবরে বলা হয়েছে, ইরানের ড্রোন ও মিসাইল হামলার জবাবে দেশটিতে ‘সীমিত আকারে’ হামলা চালানোর কৌশল নির্ধারণ করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এরই মধ্যে ইরানের হামলার শক্ত জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও পশ্চিমারা এমনটি না করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইরানের হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। তবে কোথায় ও কীভাবে হামলা চালানো হবে, এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তারা। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে ছোট আকারে হামলা চালানোর চিন্তাভাবনা করছে ইসরায়েল। দেশটি মনে করছে, ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এক ধরনের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেই জবাব দেওয়া দরকার। সে অনুযায়ী ইরানে সরাসরি বিমান হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। কারণ তেহরানের কাছে ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। আর এ ভাবনা থেকে ইরানে আইআরজিসির ঘাঁটি অথবা পরমাণু গবেষণা স্থাপনায় বিমান হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এটি হতে পারে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হামলা। আর এ হামলা চালানো হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ইরানের সামরিক স্থাপনায়ও সরাসরি বিমান হামলা বা সাইবার হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান সিমা শাইন বলেছেন, এ হামলার মাধ্যমে একটি প্রতিরোধ বার্তা দিতে পারে ইসরায়েল। এতে বেসামরিক হতাহতের শঙ্কাও কম থাকবে। আবার ইরানে সরাসরি হামলা না চালিয়ে দেশটির সমর্থিত গোষ্ঠী যেমন হিজবুল্লাহ বা ইয়েমেনের হুতিদের ওপরও হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। ইরাক ও সিরিয়ায়ও এমন আরও কিছু গ্রুপ রয়েছে যেগুলোকে ইরান অর্থায়ন করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল গাজা যুদ্ধেও মনোযোগ দিয়ে ইরানের ক্ষতি করতে পারে। কারণ ইরানের পক্ষ থেকে সহায়তা পায় হামাস। আর তাদের নির্মূল করতে পারলে এটি হবে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জয়। ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান গবেষক ইয়োসি কুপারওয়াসার বলেন, ইরানের অনেক ক্ষতি করার জন্য আমাদের গাজায় কাজ শেষ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, হামলা বা অভিযান না চালিয়েও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে ইরানকে জবাব দিতে পারে ইসরায়েল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা শিগগিরই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। আরেক খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলার দায়ে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এ সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধে এমন পরিকল্পনার করেছে তারা। এ কারণে এরই মধ্যে ইসরায়েলকে ব্যাপক প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার কথা জানিয়েছে।

ইরানি প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি : গতকাল জাতীয় সেনা দিবসের এক ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রইসি বলেছেন, ইসরায়েল কেবল সামরিকভাবে পরাজিত হয়নি তারা কৌশলগতভাবেই হেরে গেছে। রইসি বলেন, ‘ইহুদি রাষ্ট্রটি সামরিক, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাগতভাবে পরাজিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা সব দিক মিলিয়ে কৌশলগতভাবেও পিছিয়ে পড়েছে। অনেক দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। তবে এখন তারা নিজ দেশের মানুষের কাছেই ঘৃণার শিকার হচ্ছে। এটা ইসরায়েলের একটা কৌশলগত পরাজয়।’ রইসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইরানে হামলা চালালে ইসরায়েল স্রেফ ধ্বংস হয়ে যাবে।’

ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন : লেবানন থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ছোড়া একটি ড্রোন ইসরায়েলের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আঘাত হেনেছে। এতে ১৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। গতকাল ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে আরব আল-আরামশি গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় চিকিৎসক ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে হামলার বিষয়ে জানা গেছে। স্থানীয় গালিলি মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আরও দুজন গুরুতর। এ হামলার দায় স্বীকার করে হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ব্যবহার করে এমন একটি ভবন লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

এক দিন আগে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের হামলায় দুই কমান্ডারসহ তিন সদস্য নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, সীমান্তের বসতিতে বেশ কয়েকটি আঘাত এসেছে। তবে হামলায় আহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো তথ্য দেয়নি। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আক্রান্ত কমিউনিটি সেন্টারের কাছে একটি গাড়িতেও হামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর