বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হলে আন্দোলন শেষ হবে না। এ সংকটের একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান হলো- সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব গত কয়েকদিন ধরে বিবৃতির মাধ্যমে দলের বক্তব্য উপস্থাপন করলেও গতকাল কারফিউ সাত ঘণ্টা শিথিল করায় তার মধ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ফখরুল বলেন, সরকার গত কয়েক দিনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অন্তত ২ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমরা প্রকৃত তথ্য পাচ্ছি না। সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যেভাবে দমনপীড়ন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে কারফিউ দিয়েছে। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আহত, নিহতের প্রকৃত তথ্য না দিয়ে যা দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকে নয়, বহুদিন ধরে তারা তাঁর ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, সাজাও দিয়েছে। তিনি ১৪ আগস্ট অলিম্পিক উদ্বোধন করবেন। গোটা বিশ্বে তিনি এতটাই সমাদৃত, এতটা বরেণ্য তাঁর বিরুদ্ধে তিনি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। সত্য কথা বললেই রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে যায়, সত্য কথা বললে গণবিরোধী হবে। গণবিরোধী তো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আসল রাষ্ট্রবিরোধী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। গত ১৫ বছর ধরে তারা যতগুলো কাজ করেছে সবই এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে, সব জনগণের বিরুদ্ধে গেছে।
বিএনপি নাশকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সরকারের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দেশের মূল সমস্যা থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এবং অন্য স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো আলাপ করেনি। সরকার যদি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করত- তাহলে এসব পরিস্থিতি তৈরি হতো না। যে রায়টা সরকার আদালতের মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছে এটা আরও আগে আনতে পারত। রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এটার সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, সাময়িকভাবে সেনাবাহিনী নামিয়ে, দমনপীড়ন করে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে, তারা এটাকে হয়তো থামিয়ে দিতে পারে। এটার যদি রাজনৈতিক সমাধান না করে তাহলে কিন্তু কখনো এটার শেষ সমাধান হবে না। সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে তারেক রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার বলতে চাচ্ছে- আন্দোলন, বিভিন্ন হত্যার ঘটনা, ভাঙচুর যা কিছু হয়েছে- তার সব কিছুর জন্য দায়ী হচ্ছেন তারেক রহমান। এ আন্দোলনে যে তারা শত শত প্রাণ কেড়ে নিল- সে ব্যাপারে সরকার কোনো কথা বলছে না। পুলিশের গুলিতে যে অসংখ্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে সেটার ব্যাপারে কিছু বলছে না।
ফখরুল বলেন, আজকে দেশের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমরা এত খারাপ অবস্থা আর দেখিনি। একটা আন্দোলনকে দমন করার জন্য এ রকম চরম শক্তি প্রয়োগ করা, সেখানে শত শত মানুষকে হত্যা করা, পরবর্তিকালে কারফিউ দিয়ে আর্মিকে মাঠে নামানো- এটা ইদানীংকালে হয়নি। এতে সরকারের চরম ব্যর্থতাই প্রমাণিত হয়েছে। জনগণ যাতে সত্য না জানতে পারে সেজন্য সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা তথা সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে। এতে সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ মানুষেরই শুধু কষ্ট হয়নি- ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, একটা ভিডিও তৈরি করে ব্যবসায়ীদের একটা সভায় দেখানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করা হয়েছে। তার প্রমাণ হচ্ছে যে, চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ক্ষমতাসীন শ্রমিক লীগের একজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে যে, তাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল বিআরটিসির বাসে আগুন লাগানোর জন্য। কোটা আন্দোলনকারীদের সব দাবি পূরণ হয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন এখনো আছে। কারণ তাদের যে আট দফা ছিল তা এখনো পূরণ করা হয়নি।