সরকারের দেওয়া সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণা দেন। আজ থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশে।
গতকাল সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণভবনে তার সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যে কোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে।’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাল সাড়ে ৫টায় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মাইকে সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। এই দাবিতে আগামীকাল (আজ রবিবার) থেকে সারা দেশে অসহযোগ চলবে। এই আন্দোলন সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এ সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনারা সরকারকে সমর্থন না দিয়ে জনগণকে সমর্থন দিন।’
সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের আন্দোলনে হামলা ও খুনের প্রতিবাদে গতকাল পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন চিকিৎসক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, রাজনীতিক, নাট্যব্যক্তিত্ব, শিল্পীসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকাল ৩টায় পূর্বনির্ধারিত এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টা থেকেই শহীদ মিনার চত্বরে উপস্থিত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকাল ৩টায় জনসমুদ্রে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ আশপাশের এলাকা। দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী মোড়, শহীদ মিনার থেকে বেগম বদরুন্নেসা কলেজ মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়ক পর্যন্ত অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে, শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনেসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ছিল আন্দোলনকারীদের সরব উপস্থিতি। এই আন্দোলন ছড়িয়ে যায় চানখাঁরপুল, বকশিবাজার মোড়সহ আশপাশের এলাকাতেও।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাজধানীর আশপাশের শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন। এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বদরুন্নেসা গার্লস কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট দেখা গেছে।
কর্মসূচিতে সমন্বয়কদের মধ্যে সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তাদের (সরকার) কাছে কী বিচার চাইব? তারাই তো খুনি। আমাদের আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আপনাদের আন্দোলনের কারণেই ছাড়া পেয়েছি। আজকেও গুলি চালানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের ওপর। এই পরিস্থিতিতে এক দফা ঘোষণা করছি। তিনি বলেন, দেশে এত যে খুন-হত্যা হয়েছে, এজন্য তাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা নন, সব মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং এই সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির বিচার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই- যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারবে না। যে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে মানুষকে যোগ দিতে এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সবাইকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ।’
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জরুরি নির্দেশনা দেন আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা দেবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।’
আসিফ বলেন, ‘দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টকর্মী ভাইবোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রবিবার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়োট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।’ এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন- ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, আইনজীবী মানজুর আল মতিন পীতম, নাট্যব্যক্তিত্ব আজমেরী হক বাঁধন, মৌসুমী হামিদসহ অন্যরাও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দেন।
আজমেরী হক বাঁধন বক্তব্যে বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে এই জনসমুদ্রে মিশে গেছি। কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয় তা ছাত্রছাত্রীরা দেখিয়ে দিচ্ছে। যারা এখনো টিভির সামনে বসে আছেন, সবাই এসে এই ছাত্রদের সঙ্গে একত্মতা পোষণ করুন। অর্ধশত রিকশাওয়ালাও শহীদ মিনারে যোগ দেন রিকশাসহ মিছিল নিয়ে।
আন্দোলনরতরা স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলেন শহীদ মিনারসহ আশপাশের এলাকা। তারা ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, এখনি এখনি স্টেপ ডাউন হাসিনা, আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব দে, আপস না সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার বলে স্লোগান দেন। তারা আরও স্লোগান দেন, ‘দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ, ছি ছি হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না, লেগেছেরে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, জেগেছেরে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে’। ‘শেখ হাসিনা গদি ছাড় গদি কী তোর বাপ দাদার?’ বলেও স্লোগান দেওয়া হয় বিক্ষোভ মিছিল থেকে।
এ ছাড়া ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সরকার সহিংসতার পর্যায়ে এনেছে। শত শত শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনরত জনতার ওপর গুলি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি। এই সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন শেষ হবে না।
বদরুন্নেসা গার্লস কলেজের ছাত্রী সুলতানা ইয়াসমিন জানান, আজকের বিক্ষোভ মিছিল প্রমাণ করেছে ছাত্রছাত্রীসহ আপামর জনতা এই ভোটছাড়া অবৈধ সরকারের বন্দুকের নলকে ভয় পায় না। শিক্ষার্থীদের গায়ে রক্ত থাকা পর্যন্ত দাবি আদায় থেকে পিছপা হবে না তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হারুন উর রশিদ বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলি করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া ছাত্র সমাজের মুক্তি নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এরপর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হতাহতের ঘটনায় নয় দফা দাবি দিয়েছিল। এবার এক দফা দাবি তুলে ধরা হলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। গতকালের কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় একত্রিত হয়েছিলেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু জায়গায় ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনাও। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, সায়েন্সল্যাব, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড, মিরপুর-১০, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুপুর ১২টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামতে দেখা যায় জনতার ঢল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণ। এতে পুরো সায়েন্সল্যাব এলাকার সড়ক আন্দোলনকারীদের অবস্থানে বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আফতাবনগর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে খ- খ- মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে থাকেন নর্থ সাউথসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা হুট করে প্রধান সড়কে নেমে আসলে বন্ধ হয়ে যায় প্রগতি সরণির যানচলাচল। দুপুর থেকেই যাত্রাবাড়ীর কাজলা ও শনিরআখড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দুপুর ১টার পর থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হয়ে প্রধান সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শুরুতেই সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থানের কারণে দুপুর দেড়টা থেকে মিরপুর-১০ গোল চত্বর এলাকাসহ প্রধান সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মিরপুর-২ এলাকায় পুলিশ অবস্থান নেয়। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি, এডিসি, মিরপুর থানার ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের কাছে ডেকে কথা বলেন। তারা আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিতে বলেন। কোনো বহিরাগত এসে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা করতে না পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন। এ ছাড়াও মিরপুর-১০ এর আশপাশে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অবস্থান নেয়। তবে দুই পক্ষের মাঝে সংঘাত ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশ। এদিকে লাঠিসোঁটা হাতে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দুপুর দেড়টার দিকে স্লোগানে মুখর একটি মিছিল নিয়ে তারা বিএনএস সেন্টারের সামনে আসেন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে’, ‘হইহই রইরই, জামায়াত-শিবির গেলি কই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা পুলিশের সঙ্গে একই জায়গায় অবস্থান নেন। এদিকে বিএনএস সেন্টারের পাশের রাস্তায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও রাস্তায় নামেন।