কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল তাঁর এই আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। যখনই আন্দোলনকারীরা আলোচনার জন্য আসতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে বসতে রাজি। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই, আমি সংঘাত চাই না। প্রয়োজনে তারা অভিভাবক নিয়েও আসতে পারে। গতকাল সকালে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, তারা যদি এখনো আসতে চায়, কথা বলতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। তাদের দাবি কী কী বাকি আছে সেটা শুনতে চাই। যেটা আমাদের সাধ্যমতো সেটা পূরণ করতে চাই। আমি এ সংঘাত চাই না। আমি কোটা আন্দোলনকারীদের কথা শুনব, তাদের সঙ্গে বসব। তাদের দাবিদাওয়া এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছি, আর আছে কি না তা শুনব। তিনি বলেন, দেশবাসীরও জানা উচিত যে, আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা।
সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন এমন শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেপ্তার যাদের করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা ছাত্র, পরীক্ষার্থী তাদের সবাইকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি এটাও নির্দেশ দিয়েছি, (আটকদের মধ্যে) যারা নিরীহ এবং যারা ছাত্র, একেবারেই খুনের সঙ্গে জড়িত না, ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত না, তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করবে। সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করতে, তারা থাকবে, বাকিরা যাতে মুক্তি পায় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
সহিংসতা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে যেই হোক, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউ হোক, যারা অস্ত্রধারী, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায় সবারই তদন্ত হোক, বিচার হোক। শুধু ঢাকা নয়, (সারা দেশে) যে সমস্ত জায়গায় জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে তার (জড়িতদের) বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে।
হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অবশ্যই বিচার করা হবে। যারা জড়িত তদন্ত করে বের করা হবে। রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যে পুলিশ দায়ী তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, বিচার হবে।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা রাখিনি। আমি চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে যেই হোক সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, যারা অস্ত্রধারী যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাদের সবারই বিচার হোক, তদন্ত হোক। এ জন্য আমি যে জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলাম, সেখানে আরও দুজন জজ নিয়োগ দিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিশন করেছি। তাদের কর্মপরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছি, সময়ও বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটা তদন্ত হয়।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল। সার্বিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আমরা এই স্কিম চালু করেছি। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে আমরা সুবিধা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রজাতন্ত্রের সব বেতনভুক কর্মচারীর ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাতিল করে দিয়েছি। একেবারে বাতিল করে দিচ্ছি। পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক ড, কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ. ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অধ্যাপক ড. নিয়ামুল হক ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর এমপি, ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, সোহেল হায়দার চৌধুরী, অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল হক, ইঞ্জিনিয়ার এস এম খাবিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার, ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, খায়রুল আলম প্রিন্স, এস এম মঞ্জুরুল হক ও মো. অহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপাচার্য, অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাতে গণভবনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। সূত্র : বাসস।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি এম.এম. ইমরুল কায়েস জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সার্বিক পরিস্থিতি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে অশুভ শক্তির কবল থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।