সরকারকে হত্যা, নির্যাতন, দমনপীড়ন ও সন্ত্রাস বন্ধ করে ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিয়ে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের প্রতি ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও গুলি না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল রাতে দলের সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমগ্র দেশে, গ্রাম-শহরে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে- সন্ত্রাস, হামলা, মামলা দিয়ে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমানো যাবে না। তাই আর কোনো প্রাণ কেড়ে না নিয়ে, আর রক্ত না ঝরিয়ে, সংঘাত সৃষ্টি না করে এখনই পদত্যাগ করুন।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের শনিবারের কর্মসূচিতে কুমিল্লা, জামালপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে- ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে, আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে’। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ইনাশা আল্লাহ জনগণের বিজয় অবশ্যই হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের বিজয় অবশ্যই হবে। গতকাল রাজধানীর বনানীতে দলের স্থায়ী কমিটির কারাবন্দি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমস্ত সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছে। শুধু ছাত্ররা নয় এখন অভিভাবক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা যুক্ত হয়েছেন সব ভয়কে উপেক্ষা করে। এটাই হচ্ছে এবারকার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দিক। মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছেন, গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই আন্দোলন তার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্ররা যখন আন্দোলন শুরু করেছে সেই প্রথম দিন থেকেই এর যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা শুধু নয়, তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সর্ব রকমের সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এটা। সেজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য সেই দায়িত্ব-কর্তব্য আমরা পালন করছি, আমরা করতে থাকব। তিনি সারা দেশের নেতা-কর্মীর প্রতি ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানান।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা যেটা সব সময় বলে আসছিলাম, তরুণদের জাগ্রত হওয়ার কথা। সেই তরুণরাই এবার জেগে উঠেছে। এজন্যেই আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আশাবাদী এই কারণে যে, তরুণ, ছাত্র, যুবকরা যেখানে জেগে ওঠে সেই আন্দোলনকে পরাজিত করা কারও পক্ষে সম্ভব না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের সন্তানদেরকে যেভাবে হত্যা করেছে- সেটা অবর্ণনীয়। ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়, শত শত ছাত্রকে হত্যা করেছে। আমরা যখন আবার দেখতে পাই যে, তাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, আমি পত্রিকায় দেখলাম ৫৯ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এটা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও তো হারিয়ে যাচ্ছে, চিন্তাই করা যায় না এটা।