বদলের ঝড় চলছে পুলিশ প্রশাসনে। গণমানুষের কাছে আস্থা ফেরাতে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন করছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তর, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং সিআইডিসহ পুলিশের প্রভাবশালী ৩০ কর্মকর্তাকে গতকাল একযোগে বদলি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ৪টি পৃথক অর্ডারে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে চার কর্মকর্তাকে। রাতে পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের বহুল আলোচিত কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এর আগে ওএসডি করা হয় মনিরুল ইসলামকে। সকালে রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেনকে চাকরি থেকে অবসর দিয়েছে সরকার। এসবি প্রধান হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. শাহ আলমকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাউকে অবসরে পাঠানোর আগে তাদের বিরুদ্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে বদলির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে তাদের কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ভূমিকাগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ভালো ইমেজের এবং দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে পদায়নের ক্ষেত্রে।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকেই দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন পুলিশে কর্মরত এবং সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাব মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকালও পুলিশে বেশ কিছু রদবদল করা হয়। আলাদা প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তা ঠিকই হয়েছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন কোনো ভুল না হয়ে যায়। পদায়ন কিংবা বদলির ক্ষেত্রে সবারই অতীত ইতিহাস (পিসিপিআর) গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, পুলিশে আমূল সংস্কার দরকার। রংপুর রেঞ্জ এবং মহানগর কমিশনারকে কেবল অবসরে পাঠালেই হবে না। কমিশন গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। যাতে কেউ আর রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত না হয়।
জানা গেছে, ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি) এবং বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার প্রভাবশালী ২৯ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজনকে বদলি করা হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান করা হয়েছে পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মোহাম্মদ আলী মিয়াকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেনকে খাগড়াছড়িতে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার আরও সাত কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার পাঁচ কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার (ডিসি) পদে পদায়ন করা হয়েছে। ডিসি পদে পাঁচজনকে দায়িত্ব দিয়ে ডিএমপির আদেশে বলা হয়েছে, এডিসি মোহাম্মদ ওসমান গনিকে উপপুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) লজিস্টিক, এডিসি মো. আসফিকুজ্জামান আকতারকে উপপুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) ডিএমপি সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগ, এডিসি প্রত্যুষ কুমার মজুমদারকে উপপুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মিরপুর বিভাগ, এডিসি মো. রাকিব খানকে উপপুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) ট্রাফিক মিরপুর বিভাগ ও এডিসি মো. জিয়া উদ্দিন আহম্মেদকে উপপুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
পাশাপাশি ঢাকার কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১৮ পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করা হয়েছে। এ আদেশে রাজধানীর উত্তরখান থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা, গুলশান থানা, শাহবাগ থানা, পল্টন থানা, কদমতলী থানা, মতিঝিল থানা, মিরপুর থানা, পল্লবী থানা, তেজগাঁও থানা ও তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল থানার ওসিসহ ১৮ পরিদর্শককে বদলি করা হয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যায় দুজন অবসরে : রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই সময় দায়িত্বে থাকা রংপুরের ঊর্ধ্বতন দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এবং রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. আবদুল বাতেন। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ দুই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়।