ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সংঘটিত ‘গণহত্যা’ নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের অফিসে গিয়ে সংস্থার আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতিসংঘের কাছে একটি আবেদন দিয়েছি। একটি অবৈধ সরকারের অধীনে দেশে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার একটি আন্তর্জাতিক মানের তদন্তের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে আমরা জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি। তারা চিঠিটি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পাঠাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যে হত্যাযজ্ঞ এবং গুম করা হয়েছে এটা উন্মোচনের প্রয়োজন আছে। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে, দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যেসব হত্যাযজ্ঞ করা হয়েছে- এটাকে জাতির সামনে, বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে। যাতে আগামী দিনে বাংলাদেশে কেউ আর এ ধরনের কিছু করতে সাহস না পায়। নিজের দেশের নাগরিকদের হত্যা করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকার যে আকাক্সক্ষা- সেটি যেন আর না হয়। স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে এই ধরনের একটা পরিচ্ছন্ন নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তদন্তের কথা বলেছি। জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি। আমরাও অন্তর্বর্তী সরকারকেও বলেছি, জাতিসংঘকে বলার জন্য। জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে এরকম একটি তদন্ত জাতির আকাক্সক্ষা বলে আমরা মনে করি। সেটাই আমরা জাতিসংঘকে চিঠির মাধ্যমে জানাচ্ছি। এই তদন্তের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, এখানে গণহত্যার ওপরেই তদন্ত হবে। সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় যে গণহত্যা চালানো হয়েছে এটার আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন আছে। তিনি আরও বলেন, তার মানে এই না যে, দেশে যে আইনি ব্যবস্থা সেটার সঙ্গে এটা (তদন্ত) সাংঘর্ষিক। পতিত সরকারের আমলে দেশে আইন বলে তো কিছু ছিল না। এখন সেটা আমরা ক্রমান্বয়ে ফিরে পাচ্ছি। দেশের অভ্যন্তরে যে তদন্ত হবে সেটা তো অন্য বিষয়। যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে- তা সারা বিশ্বের কাছে ঘৃণিত হয়েছে এবং বিশ্ববাসী এটার প্রতিবাদ করেছে। আমরা মনে করি আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি এসব তুলে ধরতে না পারি- ভবিষ্যতেও স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিস্ট সরকার আসবে এবং দেশের মানুষকে গুম-খুন হত্যা করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে। আমরা চিরতরে এসবের অবসান চাই। ‘একজন গণহত্যাকারী কি আবার দেশে ফেরত এসে রাজনীতি করার অধিকার রাখে? এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, দেখুন ফিরে আসা না আসা তো তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে, গণহত্যার বিচারের সম্মুখীন হবে, এটা নিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। ব্যক্তি, দল তাদের যে এই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এ ব্যাপারে কারও মনে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই এটা কোনো আলোচনার বিষয় নয়।
১৫ আগস্ট মাঠে থাকবে বিএনপি টানা তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা : আগামীকাল ১৫ আগস্ট মাঠে থাকবে বিএনপি। আজ ১৪ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যে রয়েছে- দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান, সাম্প্রতিক আন্দোলনে আহত এবং শহীদদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। রিজভী আহমেদ বলেন, আগামীকাল (আজ) ১৪ ও পরদিন ১৫ আগস্ট বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, সেই খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া ১৬ আগস্ট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনাসহ যারা সাম্প্রতিক আন্দোলনে আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা এবং যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মাগফিরাতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ উপাসনালয়ে প্রার্থনা করবেন।