সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী ও নারায়ণগঞ্জে আবুল হাসান নিহতের ঘটনায় এ মামলা দায়ের হয়।
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী (১৯) হত্যা মামলায় তাদের অভিযুক্ত করে মামলাটি করেছেন তার চাচা মো. পারভেজ। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো কোনো মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তানভীর নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের চাচা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে। মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ছাবেদ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী প্রকাশ বাবর আলী, যুবলীগ নেতা মো. কাইসার, মাহবুব আলম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, নোমান শরীফ। এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, মো. জালাল, মো. ফরিদ, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন অভি, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেকার রশিদ, ওসমান গণি, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মো. জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজান সিকদার, যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জন।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হাসান স্বজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ চার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দেড় থেকে ২০০ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই আবুল বাশার অনিক। গতকাল মামলাটি দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সাত্তার টিটু। এ ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান, শাহ নিজাম, নাসির উদ্দিন, এহসানুল হক নিপু, হাবিবুর রহমান রিয়াদ, তানভীর আহমেদ টিটু, কামরুল হাসান মুন্না, আবদুল করিম বাবু, বান্টি, রাফেল, মতিউর রহমান মতি, রুহুল আমিন, ফজর আলী, খান মাসুদ, বিটু, দেলোয়ার প্রধান, লিটন সাহা, কোরবান, আলী রেজা উজ্জ্বল, মনির হোসেন, সুজিত সাহা, সাইফুল্লাহ বাদল, শওকত আলী, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. রিফাত, নাছির, শ্যামল, অহিদুজ্জামান অহিদ, শুভ, এহসান উদ্দিন আহমেদ, ফয়সাল, নির্জন দাস, টিপু সুলতান, রামু সাহা, অ্যাডভোকেট মহসিন, মিনহাজুল বিকি, বাপ্পিসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে ২০০ জন।
ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্রকে কারাগারে প্রেরণ : সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক রাজীব কুমার রায় এই আদেশ দেন। তাকে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ০৩ ধারা মোতাবেক কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলার রুহিয়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একটি বিশেষ টিম।
সাবেক এমপি লতিফ তিন দিনের রিমান্ডে : চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি এম এ লতিফকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নগরীর ডবলমুরিং থানায় গুলি করে জখম ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রিমান্ড আবেদন করা হয়। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী মাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দীন বলেন, ডবলমুরিং থানায় গুলি করে জখম ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এম এ লতিফকে আদালতে হাজির করা হয়। থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট নগরের কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাবেশ থেকে যাওয়ার পথে নগরের ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালাপাড়া ছোট মসজিদে সামনে এম এ লতিফের নেতৃত্বে দেশি অস্ত্র দিয়ে মারধর, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাদী মো. এরশাদসহ তাদের সঙ্গীদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় এরশাদ শুক্রবার ডবলমুরিং থানায় এম এ লতিফসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় এম এ লতিফ গুলি করার হুকুম দেন বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর, মো. জাবেদ, নগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাকারিয়া দস্তগীরসহ ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এম এ লতিফ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-১১ বন্দর পতেঙ্গা থেকে চারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছেন। এর আগে তিনি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন।