জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংলাপের আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ দিতে হবে। নইলে আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এজন্য অতিদ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে একটা নির্বাচন দ্রুত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়, সেজন্য এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ করতে হবে। আর সেই সংস্কার আসবে একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে একটা সংস্কার করে দিলেন- এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে- তাদের মাধ্যমেই সেই সংস্কার আসতে হবে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। সভায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএনপির নূর মোহাম্মদ খান, জহির উদ্দিন স্বপন, নজমুল হক নান্নু প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এজেন্ডাভিত্তিক কোনো আলোচনা করেনি। কয়েকজন মিলে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হবে না। কারণ এজন্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দরকার। তিনি বলেন, বিপ্লবকে সুসংহত করতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এখন যারা অন্তর্বর্তী সরকারে কাজ করছেন তারা সবাই আন্তরিক, যোগ্য মানুষ। কিন্তু আমরা এটাকে আরও দৃশ্যমান দেখতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা কী করতে চান অতিদ্রুত জনগণের সামনে তা উপস্থাপন করবেন। একটা রোডম্যাপ দেবেন যে, কীভাবে তিনি অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ঘটিয়ে তারা জনগণকে স্বস্তি দিয়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সামনের দিকে এগোবেন। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা মনে করি তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই সরকারের ওপর আমাদের, জনগণের আস্থা রয়েছে এবং সবারই আস্থা আছে। কিন্তু অবশ্যই আগামী সংসদ নির্বাচন যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশে আন্দোলন হয়েছে- সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র নেতারা যারা আজকে সহযোগিতা করছেন- তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে- এই বিপ্লবকে যেন সুসংহত করা যায়, প্রতিবিপ্লব যেন না ঘটে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইতোমধ্যে যে চক্রান্তের কথা-বার্তা উঠে আসছে, সেগুলোকে যেন প্রতিহত করা যায়। সেইগুলোতে পরাজিত করে বিপ্লবের চেতনাকে যেন আমরা সমুন্নত রেখে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বিগত সরকারের দোসর সচিবদের সরানোর দাবি : বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সব ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর) পাশে থেকে, তাঁর সঙ্গে থেকে, তাঁর দোসর হয়ে কাজ করেছেন এবং মানুষের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, লুটপাট করেছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন- তাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশে দেখতে চাই না। পত্রিকায় যখন ছবি দেখি যে, এই সব লোকেরা আবার সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই। এটা আমরা দেখতে চাই না। অবিলম্বে এই ব্যুরোক্রেসিতে যারা প্রো-পিপল আছেন, যারা জনগণের সঙ্গে সস্পৃক্ত আছেন, আইন মেনে তাদেরকে এই সরকারের পাশে দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ আগের ভাইস চ্যান্সলরগুলো রিজাইন করেছেন। এমন ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দিতে হবে- যাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও এই সরকারকে অত্যন্ত সচেতন দেখতে চাই। এ ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছি এবং দেব। সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকারের নানা কথা তুলে ধরে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।