বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কন্টিনজেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কন্টিনজেন্ট গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় প্রায় ৫৫টি বোট ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৫ হাজার বন্যার্তের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় চিকিৎসা সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মেডিকেল টিম মোতায়েন রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি ২৩ আগস্ট ফেনীর ফুলগাজী থানা থেকে অন্তঃসত্ত্বা মোছাম্মৎ সুমি বেগমকে মুমূর্ষু অবস্থায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে কুমিল্লা সিএমএইচে পাঠনো হলে তিনি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) হেলিকপ্টারযোগে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণ ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় নৌবাহিনী : দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। গত ২১ আগস্ট থেকে বন্যাকবলিত ফেনী এলাকায় উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। আইএসপিআর জানায়, নৌ কন্টিনজেন্টগুলোর মাধ্যমে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় উদ্ধারসামগ্রী, বোট, লাইফ জ্যাকেট ও ডুবুরিসহ দুই শতাধিক নৌসদস্য উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে ফেনী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন নৌ সদস্যরা। এ ছাড়াও খুলনার বন্যাকবলিত পাইকগাছা এলাকায় নৌবাহিনীর পৃথক কন্টিনজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর আরও একটি কন্টিনজেন্ট চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে।
নৌবাহিনী বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিবেলায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করছে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক এলাকায় মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। যেসব পানিবন্দি বাড়িঘরে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সেখানেও শুকনা খাবার (চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট ও ব্রেড), রান্না করা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওষুধ এবং খাবার স্যালাইনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।