ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো এবং শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করা। গতকাল কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। ড. নিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপামর জনতার প্রতিষ্ঠান। এটি কেবল আমার বা আপনার নয়। এটি কৃষক শ্রমিক রিকশাওয়ালার প্রতিষ্ঠান। আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের। আমি মানুষ, আমার ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে। তবে, আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সবার সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
গতকাল অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ঢাবির ৩০তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ, ১৯৭৩ আর্টিকেল ১১ (২) অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে সাময়িকভাবে উপাচার্য পদে পাঁচ শর্তে নিয়োগ দেওয়া হয়। নবনিযুক্ত উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আছে। তবে দাবির অনিয়ন্ত্রিত বহির্প্রকাশ হলে কাজ করা যাবে না। একটা বড় সময় অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হলে আমার কার্যকর সময় কমে যাবে। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সবার সম্পর্ককে একটা মোটামুটি সহনশীল পর্যায়ে সম্পর্কগুলো এনে কাজ চালু করতে হবে। শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে বলেন, আমরা একটু পরিস্থিতি দেখি। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের অপশাসনের কারণে আমাদের সমাজ-জাতি চূড়ান্তভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে। এখান থেকে একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু কঠিন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আসছে। ট্রমা মোকাবিলা করে পড়াশোনায় থিতু হওয়া এখন কাজ। এই প্রক্রিয়ায় সবার সহযোগিতা দরকার। আবাসিক হলগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, হলের ক্ষেত্রে ছাত্ররাই সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা। কারণ কথায় আছে- ‘জুতার ঠিক কোন জায়গায় পেরেকটি আহত করছে সেটা যিনি জুতা পরে আছে সেই ভালো জানে’ তাই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে যে তারা কি মনে করছেন। প্রথমেই শতভাগ দিয়ে শুরু করতে না পারলে ৬০-৭০% দিয়ে হলেও শুরু করতে চাই। গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, গবেষণার উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমি কখনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেইনি। দলকেন্দ্রিক রাজনীতিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
এটি আমার জায়গা না। আমি খামখেয়ালি বা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। এ ধরনের পরিসরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব না। কিন্তু যুক্তির ভিত্তিতে আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব। আমি কোনো লুকোচুরি করব না, চেষ্টা করতে থাকব। যখন মনে হবে চেষ্টার ফলেও আমি তেমন কিছু করতে পারছি না, তখন আমি বিদায় নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমাদের সমাজের এবং রাষ্ট্রের বৃহত্তর সিদ্ধান্তের একটি প্রভাব থাকবে। তবে মূল যে আদর্শ, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ মধ্যেই তা রয়েছে; মানবিক দুর্বলতা বাদ দিয়ে ন্যয্যতার ভিত্তিতে কাজ করা। বড় মাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষেত্রে আমাদের সময় লাগবে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সমাজের একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজ কী চাচ্ছে, তাও বড় বিষয়। গত ১০ আগস্ট ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন।