চিকিৎসক আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছিল স্বাস্থ্যসেবা। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে আজ থেকে পুরোদমে কাজে ফিরছেন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি শেষে ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগসহ অন্য সব বিভাগে সেবা দিতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও স্বাস্থ্য পুলিশ বাহিনী গঠনের খসড়া প্রণয়নের দাবিতে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসকরা। এরপর তারা নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী কাজে ফিরে যান। ঢামেকের জরুরি ও বহির্বিভাগে দেখা যায়, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থানে আছেন বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রোগীর সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রবিবার, সোমবার দুই দিন বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ থাকায় গতকাল চালু হওয়ার বিষয়টা অনেকেই জানেন না। তা ছাড়া সকালে বৃষ্টির কারণেও অনেকেই বের হননি। জরুরি বিভাগেও গত দিনের তুলনায় চাপ কম ছিল। টয়লেটে পিছলে পড়ে যাওয়ায় কোমরে ব্যথা পেয়ে ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন মাতুয়াইলের বাসিন্দা সাঈদ আলী। তিনি বলেন, ‘সোমবার চিকিৎসক ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালে আসিনি। বহির্বিভাগ চালু হয়েছে শুনে আজ এসে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখালাম।’
আজ বুধবার থেকে দেশের সব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক সূচিতে চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এ তথ্য জানান হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক আবদুল আহাদ। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের চারজন প্রতিনিধি। বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের চারটি দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সরকারের আশ্বাস এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপ বিবেচনায় নিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন (কর্মবিরতি) কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার থেকে সব হাসপাতালে স্বাভাবিক নিয়মে সেবা দেওয়া হবে।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখনই সেখানে চিকিৎসাসেবায় অচলাবস্থা শুরু হয়। ঢাকা মেডিকেলের অন্য চিকিৎসকরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ কর্মবিরতিতে সংহতি জানান। চিকিৎসকেরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির পাশাপাশি সারা দেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। রবিবার দুপুরে তাঁরা সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সঙ্গে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এরপর সন্ধ্যায় সংকট নিরসনে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। এসব শর্ত না মানা হলে সোমবার সন্ধ্যা থেকে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ফিরবেন বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে এ কর্মসূচিতে না গিয়ে সোমবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তিন ঘণ্টা বহির্বিভাগ খোলা ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকরা আন্দোলন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছিলেন।