জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, বাংলাদেশে এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হওয়ায় সংস্কারের একটি নতুন পর্যায় সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার আইনটিকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। তথ্য প্রাপ্তি ও বাকস্বাধীনতা ছাড়া উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয়, তেমন গণতন্ত্রও টিকে থাকতে পারে না। মানবাধিকারের ক্ষেত্রেও এ দুটি অভিন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন করপোরেশন মিলনায়তনে ‘তথ্য অধিকারের মাধ্যমে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার অগ্রগতি সাধন’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইরিন খান এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য কমিশন প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সফল হলেও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ আমলা-নিয়ন্ত্রিত। দুঃখজনকভাবে দলীয় লোকজন ও ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের জীবনাচরণ ও সংস্কৃতিতে তথ্য ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। এটিই জনসাধারণের তথ্য প্রাপ্তির বড় অন্তরায়। তথ্য কমিশনের কর্মকর্তাসহ সরকারি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তার মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আচরণগত পরিবর্তন করা যাবে না। এ সেমিনারের আয়োজন করে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (আরআইবি)। সংগঠনটি তথ্য অধিকার আইন এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছর দুই মাসব্যাপী দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠপর্যায়ে গবেষণা করা হয়েছে। এ গবেষণার ফলাফল নিয়ে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন আরআইবির নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা। মূল প্রবন্ধ পড়েন আরআইবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক রুহি নাজ। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ব্লাস্টের আইনজীবী মাহবুবা আক্তার, উত্তরবঙ্গের তথ্য অধিকারকর্মী সামিউল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নিশিতা জামান ও শিল্পী দিবারাহ মাহবুব।
আইরিন খান বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার, লিঙ্গসমতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও পরিবেশগত বিষয়গুলোর অগ্রগতির ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আইন জনগণকে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার দিলেও সরকার তা টেনে ধরে রাখে। ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক গোপনীয়তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার এমন অনেক কারণ দেখিয়ে জনগণের তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। তথ্য অধিকার আইনের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুরক্ষা আইন করা হয়। এসব আইন ও বিধিবিধানে ‘গোপনীয়তা’ ও ‘সুরক্ষা’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ফলে জনসাধারণ তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।