জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর সেখানে পৌঁছার কথা।
নানান কারণে এবার সরকার প্রধানের জাতিসংঘ সফর হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী। স্মরণাতীতকালের সংক্ষিপ্ত বহর নিয়ে চার্টার্ড ফ্লাইটের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাচ্ছেন তিনি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণে তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন। প্রধান উপদেষ্টার সফর উপলক্ষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধি দল চার্টার্ড বিমানে নিউইয়র্ক সফর করবেন না। বরং যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এবারের অধিবেশনে নিরাপত্তা, প্রেসসহ সব মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা ৫৭ জন। অন্যদিকে কভিড পরবর্তী ব্যয় সংকোচন পরিস্থিতির মধ্যে ৭৮তম অধিবেশনে ১৪৬ জন, কভিড সীমাবদ্ধতার মধ্যে ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন এবং কভিডের আগে ৭৪তম অধিবেশনে ৩৩৫ জন এবং ৭৩তম অধিবেশনে ৩৪৪ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কপর্বে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
এ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে না বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পূর্বেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। তবে দ্য নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসক- তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ রকম অধিবেশনে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চপর্যায়ের রিসিপশন আয়োজন করছে। এ রিসিপশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানগণের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানবৃন্দ, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি। রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজ শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এবারের অধিবেশন নতুন বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘে বা বিশ্বসভায় নতুন পদচারণা। এবারের অধিবেশনে আমাদের কাছে একটি বিরাট সুযোগ বিশ্বদরবারে এই বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশকে উপস্থাপনের জন্য। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।