বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া শুধু রাজনৈতিক মুক্তি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে না। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অপরিহার্য। ঐক্যবদ্ধ জাতিই একটি দেশের মানুষকে এই মুক্তি দিতে পারে। আমরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সকল প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা আংশিক সফল হয়েছি। যে পর্যন্ত ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হবে সে পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ জন্যই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
গতকাল বিকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে অর্ধ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। সিরাজগঞ্জ, বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রুমানা মাহমুদ, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ডাক্তার এম এ মুহিত, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, বেলকুচি উপজেলার আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম গোলাম, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলতাব প্রামাণিক, এনায়েতপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক মন্টু সরকার, চৌহালী উপজেলার সভাপতি জাহিদ মোল্লা। বেলকুচি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. বনি আমিন, এনায়েতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. মঞ্জুর রহমান মঞ্জু শিকদারের পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আবদুল জব্বার বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কায়েস, ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, মহিলা দলের সভানেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন হাসি প্রমুখ।
সভায় কয়েক কিলোমিটার দূরে চৌহালী উপজেলা থেকে ট্রলার এবং ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যমুনা নদী পার হয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এ স্মরণসভায় যোগ দেন। এ উপলক্ষে যমুনা সেতু থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত লাগানো হয় অসংখ্য তোরণ, ব্যানার এবং ফেস্টুন।
স্মরণসভায় তারেক রহমান বলেন, এই দেশের কোটি কোটি মানুষ চেয়েছিলেন দেশটি স্বৈরাচারমুক্ত হোক। কিছুদিন আগেও দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না। এই দেশের মানুষ আত্মত্যাগ করে সেই অধিকার অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জন করেছে। তবে আমরা এর মাধ্যমে আমরা আংশিক সফল হয়েছি। যে পর্যন্ত ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হবে- সে পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। আমাদের যে লক্ষ্য- তার অল্প একটু অর্জন করেছি। আমাদের আরও অনেক পথ যেতে হবে। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠন করতে চাই। আর এজন্যই এত আন্দোলন, এত ত্যাগ-তিতিক্ষা। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে, জনগণের মধ্যে জবাবদিহিতামূলক সরকার যদি থাকে তাহলে সে দেশের মানুষের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
এ জন্যই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমরা বিএনপি এবং আমাদের সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলনে মাঠে ছিল এবং এখনো আছে আমরা সকলে মিলে জনগণের সামনে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছি। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হলে শুধু এসব সংস্কার প্রস্তাবে থেমে থাকলেই হবে না। রাজনীতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা, বিচার বিভাগসহ নানা ধরনের সংস্কার আনতে হবে। আজকে এবং আগামী দিনে আমরা যদি সঠিকভাবে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে সক্ষম হই- তাহলে আমরা দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হব।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। বাংলাদেশের মানুষের সামনে বিপুল সম্ভাবনা। আঞ্চলিক উৎপাদন সম্ভাবনার ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আজকে যদি দেশকে এগিয়ে নিতে হয়- তাহলে শুধু যে রাজনৈতিক সংস্কার চেয়েছি- তা করলেই হবে না, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক মুক্তিই সব সুফল বয়ে আনবে না। দেশকে সামগ্রিকভাবে সম্ভাবনাময় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ দেশকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারি- তাহলে অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব।
সিরাজগঞ্জবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা একটি সম্ভাবনাময় জাতি। আমরা যদি আশপাশে তাকাই তাহলে দেখতে পাই এবং বেলকুচি, চৌহালী, কামারখন্দের নাম আসলেই তাঁত শিল্পের কথা চলে আসে। আসে তাঁতিদের কথা। এই শিল্পের সঙ্গে হাজার হাজার পরিবার ও মানুষ জড়িত রয়েছেন। অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, তাঁতশিল্প, পাটশিল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ সেদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা মওকুফ করেছিলেন। ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করেছিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মাফ করেছিলেন। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে কীভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যায় সেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আগামীতে জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি সরকারে আসলে এই তাঁতশিল্প ও তাঁতিদের জন্য সব রকমের সহযোগিতা ও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসলে বিএনপি তাঁতশিল্পের পাশে এসে দাঁড়াবে। এই শিল্পকে কীভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়- সে বিষয়ে গুরুত্ব দেব।
এমন কিছু করবেন না যাতে প্রতিপক্ষরা সুযোগ পায়- টুকু : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য হাজারও ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন। জনগণ তাদের ইচ্ছামতো ভোট প্রদান করবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য জনগণের মন জয় করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে প্রতিপক্ষ সুযোগ পায়। তিনি বলেন, বিএনপির সামনে সুদিন। কিন্তু তার আগে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। দীর্ঘদিন পরে প্রবাস থেকে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনারা আমার আত্মীয়। আমাকে ষড়যন্ত্র করে আপনাদের থেকে দূরে রেখেছে। আমি দ্রুতই ফিরে আসব। তবে আপনাদের প্রতি অনুরোধ কোনো দখলবাজিতে যাবেন না। কারও সম্পদের অনিষ্ট করবেন না। জনগণের পাশে থাকুন। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেন, তাহলে জনগণই বিএনপির নিরাপত্তা দেবে।
সরকার পতন আন্দোলনের মূল কারিগর তারেক রহমান- রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আজকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। আন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজ এবং তরুণরা নিজের জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। আর এ সংগ্রামের মূল কারিগর ছিলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন তার সিদ্ধান্তই সঠিক। সরকারের একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান জিরোতে নেমে আসে। সম্প্রতি ভারতের গণমাধ্যমও বলেছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে না পারাই ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল। রিজভী আহমেদ বলেন, হাজারো জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে নসাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত। আজকে যদি সেই খুনি ও লুটেরাদের দ্রুত বিচার করা না হয় তাহলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। রাতের আঁধারে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। তাদের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে সাধারণ ছাত্রদের জনগণের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা করছে। এ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।